রাজধানী ঢাকায় বেড়েই চলছে তীব্র যানজট। আর এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে শহরবাসীর কর্মজীবনে। প্রতিদিনই দুর্বিষহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। শহরের মোড়ে মোড়ে সড়কের অব্যবস্থাপনা, গণপরিবহন সংকট, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা ও রিকশার মত ছোটগাড়িগুলো তীব্র যানজটকে তীব্রতর করে তুলছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
শহরের ফার্মগেট, শাহবাগ, মহাখালী, মগবাজার, মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, শ্যামলী, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, কাকরাইল, মৌচাক, বাড্ডা, রামপুরা, কারওয়ানবাজার, নিউমাকের্ট রুটে এ দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে।
তবে এসব রুটে গণপরিবহন কমে ব্যক্তিগত পরিবহন বৃদ্ধিকে তীব্র যানজট সৃষ্টির কারণ হিসেবে দায়ী করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বর্তমানে ঢাকার ১১০ রুটে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার যানবাহন রয়েছে, যা প্রয়োজনীয় সংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ঢাকা মহানগরীতে মোট ৮৯৩টি বাস-মিনিবাস নিবন্ধিত হয়েছে। ২০২৩ সালে এক হাজার ৮৮৭টি এবং ২০২২ সালে নিবন্ধিত হয়েছে দুই হাজার ২৩৩টি বাস-মিনিবাস।
অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ঢাকা শহরে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন হয়েছে ৫৮ হাজার ৬৩৪টি ও প্রাইভেটকারের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৮৪। গত বছর এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৯০ হাজার ৪০৩ ও নয় হাজার ৬৮৭। এ ছাড়াও নগরীতে রিকশা বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বেড়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় মোট সড়কের প্রায় ৫০ শতাংশজুড়েই চলাচল করে ব্যক্তিগত গাড়ি, অথচ এগুলো বহন করে মাত্র ১২ শতাংশ যাত্রী। কিন্তু ৫০ শতাংশ বড় বাসে প্রায় ৮৮ শতাংশ যাত্রী পরিবহন সম্ভব। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর নেই। এটি বাস্তবায়ন হলে সড়কে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরবে। সর্বোপরি ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন জরুরি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিকের উচ্চপদস্থ আরেক কর্মকর্তা বলেন, সড়ক অবরোধ থামানো যাচ্ছে না। হুটহাট সড়ক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বেড়ে যাওয়া, ঢাকা জেলার নিবন্ধিত অটোরিকশা মহানগরের ভেতর চলাচল, দিনের বেলায় পণ্যবাহী যান চলাচল, অপরিকল্পিতভাবে নানা দাবিতে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ, সড়ক ব্যবহারকারীদের আইন না মানা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজধানীতে লাখ লাখ রিকশা চলছে। অবাধে রিকশা ছেড়ে দিয়ে আধুনিক নগরী চিন্তা করা যায় না। অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখল করে রাস্তা সংকীর্ণ করা থেকে জনগণকে বিরত রাখতে হবে। যানজট নিরসনে বাস সার্ভিসের উন্নয়নের খুবই প্রয়োজন।
মোহাম্মদপুর থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হন মিরাজ সিকদার। আসাদগেট মোড়ে তিনি বলেন, সড়কে গণপরিবহন খুবই কম। প্রাইভেট কার, অটোরিকশা, রিকশার পরিমাণ বেশি। বাসে যাত্রীর ব্যাপক চাপ থাকায় ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে হেঁটে অফিসে যাচ্ছি।
সাভার থেকে ছেড়ে আসা সাইনবোর্ডগামী লাব্বাইক পরিবহনের বাসের চালক কামাল বাংলামোটর জ্যামে আটক পড়ে জানান, সড়কে অব্যবস্থাপনা, মোড়ে মোড়ে উল্টো পথে যানবাহন চলাচলের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থেকে বেশিভাগ ভোগান্তি পোহাতে হয়।
