ঢাকা
বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ভূতাত্ত্বিক সমিতির সতর্কতা

বড় ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ, প্রস্তুতির সময় এখনই

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম

নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় সংঘটিত ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতি। 

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান অত্যন্ত জটিল, তাই এখনই ঝুঁকি কমাতে সমন্বিত গবেষণা, কার্যকর পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পটি ছিল Damaging Earthquake, কিন্তু এর মাত্রা Destructive Earthquake-এর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কম গভীরতার (১০ কিমি) এ কম্পন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত ব্যাপকভাবে অনুভূত হওয়া জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ভূতাত্ত্বিক সমিতি জানায়, বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান ও বার্মিজ প্লেটের কনভারজেন্ট বাউন্ডারিতে অবস্থান করায় ভূগর্ভে পুঞ্জিভূত চাপ যে কোনো সময় বড় ভূমিকম্পের সৃষ্টি করতে পারে। মধুপুর ফল্ট, দাউকি ফল্টসহ পরিচিত–অপরিচিত বহু ফল্টলাইন এখনো সক্রিয়। অতীত ইতিহাস বলছে প্রতি ২০০-২৫০ বছর পর বড় ভূমিকম্প এই অঞ্চলকে প্রকম্পিত করেছে।

সংগঠনটির মতে, ‘বাংলাদেশ স্থির নয়, মধ্যাঞ্চল বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক কম্পনগুলো দেখিয়ে দিয়েছে ভূগর্ভে চাপ জমে আছে।’

ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় বড় ভূমিকম্প হলে ব্যাপক প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে। সমিতি বলছে ‘ভয় নয়, প্রস্তুতিই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা’।

ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস দেওয়া না গেলেও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল শনাক্ত করা, সক্রিয় ফল্ট চিহ্নিত করা এবং ঝুঁকি মানচিত্র (Earthquake Vulnerability Map ও Zoning Map) প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি।

সমিতি ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনায় তিনটি স্তরের রূপরেখা তুলে ধরে

গবেষণা ও ঝুঁকি নিরূপণ

  • সক্রিয় ও সুপ্ত ফল্টলাইন শনাক্তকরণ
  • প্লেট বাউন্ডারীর বিস্তৃতি ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ
  • জাতীয় ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র হালনাগাদ
  • ঢাকায় জরুরি ভিত্তিতে মাইক্রোজোনেশন

ভূমিকম্পকালীন প্রস্তুতি

  • উদ্ধার কার্যক্রমে আরও দক্ষতা বৃদ্ধি,
  • চিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা

প্রতিরোধমূলক নকশা ও অবকাঠামো

  • ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নকশা
  • প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদদের বাধ্যতামূলক সম্পৃক্ততা

ভূতাত্ত্বিক সমিতি ভূমিকম্প সংক্রান্ত গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। গণমাধ্যমের জন্য বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরে একটি স্থায়ী তথ্য ডেস্ক স্থাপন করার সুপারিশ করা হয়।

সমিতি ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে ৯টি সুপারিশ তুলে ধরে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

  • জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত টাস্কফোর্স গঠন
  • ভূতাত্ত্বিক তথ্য একত্র করা ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা
  • সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে ভূতাত্ত্বিকদের নেতৃত্বে নিয়ে কাজ করা

অধ্যাপক ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় অঞ্চলে অবস্থিত এখান থেকে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি কখনো পুরোপুরি যাবে না। তবে বৈজ্ঞানিক প্রস্তুতি নিলে ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব।’

DR/SN
আরও পড়ুন