ঢাকা
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

আজ ঐতিহাসিক যশোরমুক্ত দিবস 

আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৯ এএম

আজ ৬ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক যশোরমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল এই জেলা। এদিন দুপুরের পরপরই যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় হানাদারবাহিনী। প্রথম শত্রুমুক্ত হয় যশোর। যশোরেই প্রথম উঠেছিল বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সূর্যখচিত গাঢ় সবুজ পতাকা।

ভারতীয় মিত্রবাহিনী এদিন বিকেলের আগেই মুক্তিসেনাদের সহায়তায় পৌঁছে যায় যশোর ক্যান্টনমেন্টে। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট তখন খালি। পাকিস্তানি সেনারা তার আগেই ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে চলে গেছে। মুক্তিসেনারা দেখতে পায় খাবার টেবিলে প্লেটে খাবার। পড়ে আছে ভাত-তরকারি। অর্থাৎ জীবন বাঁচাতে খাবার ফেলে স্থান ত্যাগ করে নিরাপদ সন্ধানে তাদের পলায়ন ঘটে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) বৃহত্তর যশোর জেলার (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল) উপ-অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম জানান, ৭১ সালের ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাকিস্তানি আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পর্যদস্তু পাকিস্তানি বাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পলায়ন শুরু করে। যশোর সেনানিবাস ছেড়ে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে খুলনার গিলাতলা সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। পলায়নকালে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলীর রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই হয়।

৬ ডিসেম্বর বিকেলের আগে যশোর সেনানিবাস খালি করে পালিয়ে যায় হানাদাররা। বিকেলে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে দখল নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বাসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। পাড়া-মহল্লায়ও চলে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে স্লোগানে ফেটে পড়েন গোটা জেলার মানুষ।

এর আগে উত্তাল একাত্তরের যুদ্ধ প্রস্তুতিকালে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ যশোর কালেক্টরেটের সামনে শহরের রাজপথে বের হয় জঙ্গি মিছিল। যশোরবাসী শপথ নেয় স্বাধীনতা যুদ্ধের। এই মিছিলে হানাদারবাহিনী গুলি চালালে শহীদ হন চারুবালা কর। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি যশোরের প্রথম শহীদ। 

এরপর থেকে যশোরে সংগঠিত হতে থাকে প্রতিরোধ। নেতৃত্ব দেয় সংগ্রাম পরিষদ। সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে থাকে ছাত্র, যুবক ও নারীদের। ২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী জাতীয় সংসদ সদস্য জননেতা মশিয়ূর রহমানকে তার বাসভবন থেকে ধরে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে নৃশংস নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে।

২৯ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী যশোর শহর ছেড়ে সেনানিবাসে চলে যায়। ৩১ মার্চ নড়াইল থেকে হাজার হাজার লোকের বিশাল একটি মিছিল শহরে আসে। শহরবাসীর সাহায্যে সশস্ত্র মিছিলটি হামলা চালায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। মুক্তি পায় সব রাজবন্দি। এর আগে ৩০ মার্চ যশোর সেনানিবাসের বাঙালি সৈনিকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে।

পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধে লেফটেন্যান্ট আনোয়ারসহ অনেকে এখানে শহীদ হন। জুলাই মাস থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিধারা পাল্টে যায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যশোর শহর ও অন্যান্য এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানগুলোতে প্রচণ্ড আক্রমণ চালাতে থাকে।

যশোর মুক্তিযুদ্ধের ৮নং রণাঙ্গন। কমান্ডার ছিলেন মেজর মঞ্জু। অন্যদিকে, পাকিস্তানি বাহিনীর মোতায়েন ছিল ১০৭নং ব্রিগেড। এর কমান্ডার ছিলেন বিগ্রেডিয়ার হায়াত খান। যশোর সেনানিবাস থেকে শত্রুবাহিনী ৬টি জেলা নিয়ন্ত্রণ করত। ২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলে অভিযান শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের শক্তিশালী ঘাঁটি চৌগাছা ঘিরে ফেলে সম্মিলিত বাহিনী। মিত্র বাহিনীর গোলার আওতায় আসে যশোর সেনানিবাস।

২২ নভেম্বর রাতে পতন হয় চৌগাছার। হানাদার বাহিনী সলুয়া বাজারে তৈরি করে অগ্রবর্তী ঘাঁটি। এ সময় যশোর সেনানিবাসের তিনদিকে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে। এ অঞ্চলের পাকিস্তানি বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান প্রাণ ভয়ে তার অফিস স্থানান্তর করেন খুলনায়। প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান চলে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। যুদ্ধে টিকতে না পেরে ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী পালিয়ে যায় খুলনার দিকে। মুক্ত হয় যশোর জেলা। যুদ্ধবিধ্বস্ত মুক্ত শহরে উড়ে স্বাধীন দেশের পতাকা।

ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে যশোর জেলা প্রশাসন শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক মো. আশেক হাসান।

HN
আরও পড়ুন