দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের রাত্রিযাপনের জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দর চত্বরে সিভিল অ্যাভিয়েশনের করা প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দ্বিতল ভিভিআইপি রেস্ট হাউস দীর্ঘ ৪ বছর ধরে ভোগদখল করে আসার অভিযোগ উঠেছে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে।
দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে রেস্ট হাউসটি পুরোপুরি নিজ দখলে রেখে পারিবারিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, কেউ রেস্ট হাউসের রুম কেউ ভাড়া নিতে চাইলেই বলা হয় বুকিং আছে। ফলে দেশি ও বিদেশি ব্যক্তিরা কোনো সময়েই রেস্ট হাউসে অবস্থান করার সুযোগ পান না। এমনকি রেস্ট হাউস চত্বরে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক রাজহাঁস ও কবুতরের খামার গড়ে তুলেছেন। আর এসব পশুপাখিকে দেখভাল করার জন্য বিমানবন্দরে কর্মরত তিনজন সরকারি কর্মচারীকে নিযুক্ত করেছেন। আর রেস্ট হাউস পাহারা দেয়ার নামে তিনজন আনসার সদস্য পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছে।
উল্লেখ্য, তিন তারকা হোটেলের আদলেই গড়া হয় এই ভিভিআইপি রেস্ট হাউসটি। প্রতিটি রুম অত্যাধুনিক মানে সজ্জিত। ডাবল বেডের চারটি রুম রয়েছে এ রেস্ট হাউসে। খাবারের জন্য বিশাল ডাইনিং স্পেস। রেস্ট হাউসে অবস্থানরত ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে অতিথি রুম (ড্রয়িং রুম)। প্রতিটি শয়নকক্ষে আছে একটি করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি), ড্রয়িং রুম ও ডাইনিং রুম মিলে আরো আছে তিনটি এসি। সব মিলে সাতটি এসি চলে সার্বক্ষণিক ওই রেস্ট হাউসে। খাবার দাবার, রান্নার জন্য ইলেকট্রিক চুলা ও হিটারের ব্যবস্থা আছে। রেস্ট হাউসটি থেকে সারা বছর মিলে এক কানাকড়ি আয় হয় না সরকারের।
এসব কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা হয় সরকারি কোষাগার থেকে। এসি ও ইলেকট্রিক চুলা বাবদ বছরে গুণতে হচ্ছে এক লাখ টাকারও বেশি বিদ্যুৎ বিল। এছাড়াও রেস্ট হাউস রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতি বছর ব্যয় দেখানো হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো। রেস্ট হাউস থেকে এক টাকা আয় না হলেও ব্যয় হচ্ছে সব মিলে কর্মচারীদের বেতনসহ বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার মতো। গত চার বছরে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা।
এছাড়াও প্রত্যক্ষ ক্ষতির তালিকায় রয়েছে আরও কয়েক লাখ টাকা। আর তাহলো বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকের বাসযোগ্য যে বাসাটি রয়েছে সেটিতে তিনি বসবাস না করে ১১ ও ১৪ গ্রেডের কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। এমন বাসা বরাদ্দ পান কমপক্ষে নবম গ্রেডে কর্মরত সরকারি কর্তাব্যক্তিরা। নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা ওই বাসাটি বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করায় সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যথার্থ বাসা ভাড়া পাচ্ছে না। এমনকি তার (ব্যবস্থাপক) নামে বরাদ্দকৃত জিপটি যানবাহন শাখায় না রেখে রেস্ট হাউস চত্বরে রাখে। এর ফলে সরকারি অর্থে ক্রয় করা জ্বালানি ব্যবহার করে তিনি ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি নিয়ে দিনে ও রাতে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে বলে অভিযোগ আছে। এতেও সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকের এমন ঘটনায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মেলেনি। বরং হেনস্থার শিকার হয়েছেন অভিযোগকারীরা।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ নিম্ন কর্মচারীদের কাছে বর্তমানে আতংকে পরিণত হয়েছেন বলে একাধিক কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। কোনো কর্মচারী বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করার সাহস পান না। পান থেকে চুন খসলেই কর্মচারীদের করা হয় বদলী।
রেস্ট হাউস দীর্ঘ চার বছর ধরে নিজ দখলে রাখার অভিযোগ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। এগুলো তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মন্তব্য করেন তিনি। রেস্ট হাউসে হাঁস ও কবুতরের খামার কেন করেছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।
