বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস করে নগরীর টাইগারপাস থেকে সিআরবিমুখী পাহাড়ি রাস্তার ৪৬টি শতবর্ষী গাছ কেটে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এতে গাছ ও পাহাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হবে বলে জানান পরিবেশবিদরা। সিডিএ এই আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে নাগরিক সমাজ।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে গাছ কাটা ও জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে বন বিভাগ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে পৃথক আবেদন করেছে সিডিএ। যে সকল গাছ কাটা হবে সেগুলোর গায়ে ইতোমধ্যে সাদা রং দিয়ে নাম্বারিং করে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদন পেলে এই এলাকায় পরিবেশ রক্ষাকারী শতবর্ষী অর্ধশত গাছ কেটে ফেলার অপেক্ষায় রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংস্থা। ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলবে।
এদিকে গাছ কাটার এই সিদ্ধান্তকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলছেন পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা র্যাম্প নির্মাণের জন্য সিডিএকে বিকল্প পরিকল্পনা খোঁজার অনুরোধও করেছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, কোনো প্রকল্প গ্রহণের সময় শহরের প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েই তা করতে হয়। এটা সারা পৃথিবীতে অনুশীলন করা হয়। সিআরবি হেরিটেজ ঘোষিত এলাকা। সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ করতে চাইলেও চট্টগ্রামবাসীর আন্দোলনের কারণে রেলওয়ে পিছু হটেছে। পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো স্থাপনা সিআরবি ও আশেপাশের এলাকায় করতে দেওয়া হবে না। র্যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ কাটার পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও আমরা আন্দোলন করব। ইতোমধ্যে সোমবার (১ এপ্রিল) আমরা সিআরবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছি।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করা এ এক্সপ্রেসওয়ে গত বছরের নভেম্বরে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় এটি এখনো যানবাহন চলাচলের জন্য চালু করা হয়নি। সময়মত কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ের ১৪টি র্যাম্পের মধ্যে একটি জিইসি মোড়ে, দুটি টাইগারপাসে, চারটি আগ্রাবাদে, একটি ফকিরহাটে, দুটি নিমতলায়, দুটি সিইপিজেডে এবং দুটি কেইপিজেডে নির্মাণ করা হবে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিআরবি এলাকায় র্যাম্প নির্মাণ করা হবে। ফলে পাহাড়ি এ সড়কে র্যাম্প নির্মাণে গাছ কাটা হলেও পরিবেশের ক্ষতি হবে না।’
তিনি বলেন, ‘র্যাম্প নির্মাণে ৪৬টি গাছ কাটার পরিকল্পনা থাকলেও আমরা কয়েকগুণ গাছ রোপণ করব। পাহাড়ের ঢালে দ্বিতল পদ্ধতিতে নির্মিত সড়কটির কোনো ক্ষতি না করে জাতীয় স্বার্থে র্যাম্পটি নির্মাণ করা হবে। এজন্য রেলওয়ের কাছ থেকে জমি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করবে সিডিএ।’ রেলের বিদ্যমান প্রটেকশন ওয়াল না ভেঙে পাহাড়কে সুরক্ষিত রেখেই সিডিএ র্যাম্প নির্মাণের কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
