চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রচণ্ড খরা ও তাপদাহের কারণে আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। বাগানে বোঁটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। সেচ ও নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না আম। আর এতেই এমন আশঙ্কা করছেন তারা।
চাষিদের দাবি, ইতোমধ্যে অনেক বাগানে প্রায় ৩০ শতাংশ আমের গুটি ঝরে গেছে। সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের আম চাষি শামিল আলী বলেন, তীব্র খরায় আমের বোঁটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। চলতি মৌসুমে আমের মুকুল কম ছিল। তারপরও শুরুর দিকে ঘন কুয়াশা ও চৈত্রের বৃষ্টিতে প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুকুল। এরপর যে তীব্র তাপদাহ চলছে এতে করে গাছে আম ধরে রাখায় অনেক কষ্টকর। শুধু শামীম আলী নন, এমন বৈরী আবহাওয়া আমের গুটি ঝরে পড়ার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার সব চাষিরা।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন শামীম খান দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, এমনিতেই এ বছর শীতের কারণে মুকুল দেরিতে এসেছিল, তারপর অসময়ের বৃষ্টিতে মুকুল ঝরে যায়। আর এখন বৃষ্টির অভাবে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। এমন তাপদাহ আর কিছুদিন অব্যাহত থাকলে আরো ক্ষতির মুখে পড়তে হবে আমাদের। বৈরী আবহাওয়া আর অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর আম উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। ফলে স্বস্তিতে নেই আম চাষিরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় শিবগঞ্জে। কিন্তু এবার শিবগঞ্জে আমের অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের চাষিদের আম বিক্রি করে কীটনাশক খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চলমান রয়েছে। ফলে প্রচণ্ড তাপ ও খরায় বোঁটা শুকিয়ে আম ঝরে যাচ্ছে। এতে আম চাষিরা লোকসানের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে খরায় আম ঝরে পড়া থেকে বাঁচতে অনেকেই গাছে পানি সেচ দিচ্ছেন।
তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে, কৃষি বিভাগ যে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার কাছাকাছি যাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার সব উপজেলায় অতিরিক্ত খরা মোকাবিলায় আমের গুটি টিকিয়ে রাখতে চাষিদের পরামর্শ দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বছর জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর জেলায় আমের উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন।
