দীর্ঘ ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগর ও মেঘনায় জেলেদের মাছ শিকারে যাওয়ার কথা থাকলেও দ্বীপ হাতিয়ার ঘাটসমূহ থেকে ছাড়েনি কোনো ফিশিং বোট।
নদী-সমুদ্রে মাছ না থাকায় বোটসমূহ ছাড়েননি বলে উল্লেখ করেন মৎস্যজীবীরা। এতে বেকার ও অভাব-অনটনে সময় কাটাচ্ছেন এ উপকূলের প্রায় ১৮টি ঘাটের আশি হাজারের বেশি মৎস্যজীবী। এদের মধ্যে সামান্য সংখ্যক জেলে রয়েছেন যারা সরকারি সহায়তার আওতায়।
গত তিনদিন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিভিন্ন মৎস্যঘাট ঘুরে জানা যায়, সমুদ্র ও তীরবর্তী এলাকায় মাছ না থাকায় ফিশিং বোট মালিকরা ঘাট থেকে তাদের বোট ছাড়ছেন না। যে দু-তিনটি বোট ছেড়ে যাওয়ার খোঁজ পাওয়া গেছে ৩৬ ঘন্টা নদীতে বিচরণ করেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না বলে হতাশা ব্যক্ত করেন দানার দোল ঘাটের সোহরাব নামের এক মৎস্যজীবী।
তবে উপকূলবর্তী অনেক জেলেদের ঘের জালে পোয়া, বাটা, চেওয়া, পাঙ্গাস ও ছোট চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়ায় মোটামুটি ছোট মাছ ধরার ট্রলারগুলোর খরচ মেটানো যায় বলে মালিকরা জানান।
সূর্যমুখী ঘাটের মফিজ পাটি জানান, নদীতে মাছ নেই তাই আমরা বোট নামাইনি। সামনের কাটালে বোট নামানোর চিন্তা করছেন বলে জানান তিনি। চেয়ারম্যান ঘাটের বরফ ব্যবসায়ী বিপ্লব নামের একজন জানান, জালে মাছ না ধরা পড়ায় সাগরে ফিশিং বোট যাচ্ছে না। এতে তাদের ব্যবসাও থমকে গেছে।
দানার দোল ও রহমত ঘাটের মৎস্যজীবী সোহরাব জানান, হাতিয়ার দানার দোল থেকে পূর্বে গ্যাসফিল্ডেরও দূরবর্তী স্থানে তার দুইটি বোট জাল, খাবার, জ্বলানী ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে মাছ শিকারে গেছে। দুইদিন পার হলেও এখনো আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যায়নি। এতে ব্যাপক লোকসানে পড়তে হয়েছে।
চরইশ্বর কাজীর বাজার এলাকার জেলেপল্লিতে বেড়ে ওঠা ১৯ বছর বয়সী কিশোর আরমান হোসেন বলেন, অল্প কিছু পড়াশোনা করেছি, শিশু বয়সে বাবা মারা যাওয়ায় মা পড়াতে পারেননি। তাই নদীতে মাছ ধরে মা ও ছোট ভাইবোনসহ চার সদস্যের পরিবারের জীবীকা নির্বাহ করি। কিন্তু বেকার অবস্থায় মৎস্য অফিসের কোনো সহায়তা পায় না, নিবন্ধনও হয়নি। তিনি চরইশ্বর ইউনিয়ন ৭ নম্বর ওয়ার্ড জেলে পল্লীর মৃত মো. হান্নানের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতিয়া উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। এর মধ্যে এবারের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন মাত্র চার হাজার ৮৭৩ জন নিবন্ধিত জেলে ভিজিএফ এর চাল পেয়েছেন। জেলে প্রতি ৫৬ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও মৎস্য অফিস সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০ কেজি করে চাল দিয়েছে। অথচ হাতিয়ার পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে গভীর সমুদ্রবর্তী না হয়েও ভিজিএফ সুবিধা পেয়েছে ১৭ হাজার ৮৬০ জেলে।
হাতিয়া মৎস্য দফতর জানিয়েছেন, বিভিন্ন প্রচারণাসহ কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের সহযোগিতায় নিয়মিত অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় মাছসহ ১৩টি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার ২৫০ টাকা এবং এক লাখ ৬৬ হাজার টাকার মাছ নিলামে তোলাসহ বিপুল পরিমাণ জাল পোড়ানো হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ হাসান অভিযানসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরে বলেন, জেলেরা আপাতত মাছ কম পেলেও কিছুদিনের মধ্যে নদী-সমুদ্রে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে। অভিযানের সফলতা দেখতে পাবে।
সালথায় পূর্ব শত্রুতার জেরে হামলায় আহত ৪
উন্নত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের দাবিতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন
দিনাজপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫