ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

চরফ্যাশনের চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে পানিবাহিত রোগ

আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪, ০৮:১১ পিএম

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের পানি নেমে গেলেও এখনো দুর্ভোগ কমেনি চরফ্যাশন উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত চরগুলো বাসিন্দাদের। রিমালে উপজেলার সাগর মোহনার ঢালচর, চর মোতাহার, চর মানিকা, কলমি চর, কুকরিমকরি ও তেতুলিয়ার পাড়ের মজিব নগগর সহ উপজেলার ৯ ইউনিয়নের প্রায় ২০টি বিছিন্ন দ্বীপচরের মানুষ হয়েছে পানিবন্দি।

নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। দূষিত পানি পান ও জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের পানিতে চলাফেরা করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ঘরে ঘরে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ দিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। ফলে চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন স্থানীয় লোকজন। 

ক্ষতিগ্রস্ত চর এলাকা ঘুরে ভুক্তভোগী লোকজন, চারজন পল্লিচিকিৎসক, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) সঙ্গে কথা বলে এমন পরিস্থিতির কথা জানা যায়।

চরফ্যাশন উপজেলার দুর্গম ইউনিয়ন ঢালচরে দুই শতাধিক পুকুর আছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় এসব পুকুর জোয়ার ও জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়ে পানি লবণাক্ত হয়ে যায়। অনেক পুকুরের পাড় ভেঙে নদীর সঙ্গে সরাসরি নালা সৃষ্টি হওয়ায় এখন নিয়মিত প্লাবিত হচ্ছে। পুকুর ও খালের পানি ছাড়াও ঢালচরের তিন দিকে নদী ও একদিকে সাগর হওয়ায় ঢালচরবাসীকে বাধ্য হয়ে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। রোগের মধ্যে আছে অ্যালার্জি, জ্বর, পাতলা পায়খানা ও আমাশয়। 

ঢালচরের আনন্দবাজারের বাসিন্দা মাইনুদ্দিন মাঝি বলেন, তার ছেলে ছাব্বির হোসেনের (১০) চুলকানি ও জ্বরে আক্রান্ত। ওষুধ খাওয়াচ্ছেন, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, ঢালচরে প্রায় দুই হাজার পরিবারের বসবাস। ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর এরই মধ্যে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। চরের ঘরে ঘরে মানুষের জ্বর, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও অ্যালার্জি দেখা যাচ্ছে। কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক নেই। নেই কমিউনিটি ক্লিনিকও। বারবার বলা সত্ত্বেও এ বিষয়ে কেউ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। 

ঢালচর ইউনিয়নের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মো. শরীফুল ইসলাম সওদাগর বলেন, ঢালচরে তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক ছিল। এখন ধরতে গেলে একটিরও কার্যক্রম নেই। কারণ, তিনটি ক্লিনিক নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি কোস্ট ফাউন্ডেশনের একটি কক্ষে যে ক্লিনিকটি পরিচালনা করতেন। সেখানেও ঘূর্ণিঝড় রিমালে দুর্গত মানুষের মালামাল এমনভাবে রাখা হয়েছে, সেখানে চিকিৎসা দেওয়া মতো অবস্থা নেই। 

এ দিকে ঢালচরে অতিরিক্ত লবণ পানিতে মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত গরমেও মানুষ অতিষ্ঠ। পুকুরভর্তি লবণপানি পরিবর্তন ছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি বিতরণ করা প্রয়োজন।

ঢালচরে চারজন পল্লিচিকিৎসক আছেন। তাদের মধ্যে প্রবীণ পল্লিচিকিৎসক মফিজুল ইসলাম ও মো. ইকবাল হোসেন জানান, তাদের এলাকায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রোগী পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। স্থানীয় বেশির ভাগ মানুষের শরীরে ঘামাচি ও ফোঁড়ার মতো দেখা দিচ্ছে। 

চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা শোভন কুমার বসাক বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে প্রভাব থাকে। সুপেয় পানির শূন্যতা দেখা দেয়, পানির ঘনত্ব বাড়ে। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগগুলো বাড়ে। পেটব্যথা ও বমি হতে পারে আর লবণপানির কারণেও শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। রোগ-শোক বৃদ্ধি পায়। এখন তাদের অনেক করণীয় আছে কিন্তু ঢালচরের সব কমিউনিটি ক্লিনিক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে ওই এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে একটি চিকিৎসক দল পাঠানোর চেষ্টা করবেন বরে জানান তিনি।

AHA/FI
আরও পড়ুন