দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে মৎস্য খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। কিন্তু এই খাতে কর ফাঁকি দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে পটুয়াখালীর আলীপুর, মহিপুর ও কুয়াকাটা মৎস্য বন্দরগুলোতে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হলেও সরকারের কোষাগারে জমা পড়ছে না যথাযথ রাজস্ব। রাজস্ব বিভাগের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
উপকূলীয় জেলেদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) ২০০৯ সালে আলীপুর ও মহিপুরে আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। ২০১৬ সালে প্রায় ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি কেন্দ্র নির্মাণ সম্পন্ন হয় এবং ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মৎস্যমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এর উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর থেকেই আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসায়ীরা মাছ বেচাকেনা করছেন। প্রতিদিনই পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়ে জমে ওঠে আড়ত। তবে অভিযোগ রয়েছে, তারা নানা কৌশলে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন।
অন্যদিকে মহিপুরের ব্যবসায়ীরা জায়গা সংকটের অজুহাত দেখিয়ে খাপড়াভাঙ্গা নদীর তীরে নিজের মতো করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে মহিপুর অবতরণ কেন্দ্রে রাজস্ব আদায় কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

ব্যবসায়ীদের জন্য নির্মিত এই দুটি অবতরণ কেন্দ্রে রয়েছে অফিস ভবন, ৪০ কক্ষবিশিষ্ট আড়ত ভবন, অকশন শেড, বরফকল, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, আবাসিক ভবন, ট্রাক পার্কিং, গ্যাংওয়ে, পন্টুনসহ নানা সুবিধা। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার না হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কেবল আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে কেন্দ্রগুলো ব্যবহার না করায় প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না।”

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “মহিপুর কেন্দ্রে জায়গার ঘাটতি আছে। তাই ব্যবসায়ীরা বাইরে মাছ বেচাকেনা করছেন। সমস্যার সমাধান হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।”

প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হওয়া এই দুই বন্দরে যদি স্থানীয় প্রশাসন, রাজস্ব বিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তর সমন্বিত উদ্যোগ নেয়, তবে প্রতিবছর ৪- ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
