ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ব্যারিস্টার সাইফের নয়নাভিরাম ছাদবাগান

আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম

কেবল ইট-পাথরের শহরগুলোতেই নয়, গ্রামাঞ্চল থেকেও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ প্রকৃতি। কিন্তু মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। প্রকৃতিপ্রেমী নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে ধরে রাখতে চায় আবাসস্থলে। সৌখিন মানুষরা তাদের ঘরবাড়িতে সবুজ প্রকৃতিকে ধরে রাখার জন্য একান্ত ভাবনা আর প্রচেষ্টায় নিজ বাড়ির ছাদে তৈরি করছে ছাদবাগান।

তবে এ বাগান এখন আর সৌখিনতায় আটকে নেই। নিরাপদ সবজি দিয়ে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ, পারিবারিক বিনোদন এবং অবসর কাটানোর এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এ ছাদবাগানগুলো। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহুরগুলোতে কৃষি ব্যবস্থার সৌখিন পদযাত্রা সময়ের বিবর্তনে এক সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিতে যাচ্ছে।

ছাদে বাগান কোনো নতুন ধারণা নয়। প্রাচীন সভ্যতায়ও ছাদে বাগানের ইতিহাস চোখে পড়ে। খ্রিস্টের জন্মেরও আগে মেসোপটিয়াম ও পারস্যের জুকুরাক নামীয় পিরামিড আকৃতির উঁচু পাথরের স্থাপনায় বাগান ও ছোট গাছ লাগানোর জন্য স্থান নির্ধারণ করার নিদর্শন পাওয়া যায়। পম্পেই নগরীর কাছেই প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রোমান ভিলায় কেবল একটি নির্দিষ্ট ছাদ তৈরিই করা হয়েছিল বাগান করার জন্য।

১১ শতকের পুরনো কায়রো শহরে বহুতল ভবন নির্মাণ হয়, যার কোন কোনটি ছিল ১৪ তলা পর্যন্ত বিস্তৃত। এসব ভবনের সবগুলোর ছাদেই বাগান স্থাপন করা হয়েছিল সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে, যাতে সেচ দেওয়ার জন্য প্রাণি শক্তির সাহায্যে চাকা ঘুরিয়ে নিচ থেকে ওপরে পানি তোলা হতো। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানও ধারণা করা হয় বিভিন্ন ছাদ ও বারান্দার সমন্বয়ে তৈরি। ঐতিহাসিকভাবে এ উদ্যানের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও তৎকালে বর্তমান ইরাকের মসুল শহরের কাছেই আরেক ঝুলন্ত উদ্যানের নিদর্শন পাওয়া যায়।

বিশ্বব্যাপী নগরায়ণ বাড়ছে। ফলে শহুরে কৃষি নামক এক নতুন শব্দ আমাদের শব্দ ভাণ্ডারে যুক্ত হচ্ছে। এ কৃষির শুরুটা সৌখিন। ব্যাপক বাণিজ্যিক উৎপাদন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব না হলেও ধীরে ধীরে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কেবল বাংলাদেশেই নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর গুরুত্ব দিনদিন বাড়ছে।

শহর ও গ্রামাঞ্চলে ফুল, ফল ও সবজির পারিবারিক বাগান এখন আর কেবলই সৌখিনতা বা পারিবারিক প্রয়োজন নয়। পরিবেশ রক্ষা আর নগরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে অনেক দেশেই বাড়ির ছাদ, বারান্দা, গাড়ি বারান্দা, ফুটপাত, পার্ক, সরকারি খাস ভূমি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতিটি পর্যায়ে কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে উদ্যান ফসল ও বাহারি ফল-ফুলের গাছের সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে সবুজ নগরায়ণ। আমাদের দেশেও হাঁটি হাঁটি পা পা করে ছাদবাগানের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে সবুজায়ন শুরু হয়েছে।

তবে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নয়, বরং একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগেই এদেশে ছাদ বাগানের সূচনা। এমনই এক নয়নাভিরাম ছাদবাগান গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের মেধাবী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইফুল হক সাইফ। তিনি তার ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের বসতভবনের ছাদে ফুল ও ফসলের এ আকর্ষণীয় বাগান গড়ে তুলে নিজেদের পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও বিষমুক্ত সতেজ ফলমূল-শাক-সবজি বিতরণ করে থাকেন। তিনি শুধু ছাদ কৃষিই নয় নিজ বাড়ির আঙ্গিণায়ও ফুল-ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। ছাদ ও সবুজের ঘেরা বাড়ির আঙিনায় তার এ বাহারী ফুল-ফল ও সবজির বাগান সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অনেকেই তার এ বাগানের সৌন্দর্যে অবগাহন করতে যান।

তার ছাদবাগানে রয়েছে- মাল্টা, জাম্বুরা, দেশী ও থাই পেয়ারা, জাম, ডালিম, আনার, বিভিন্ন জাতের আম, লেবু, ড্রাগন ফল, আমলকি, লকটন, পেপে, সফেদা, পুঁইশাক, লাউ, ঢেঁরশ, মরিচ, পুদিনা, গোলাপ, গন্ধরাজ, বেলী, হাসনাহেনা, কাঠগোলাপ, তিকোমা, জবা ও জুঁইসহ নানা ধরণের ফুল, ফল ও সবজি গাছ।

আর বাড়ির আঙ্গিনায় রয়েছে- নিম, লিচু, নানা জাতের আম, নারকেল, কাঠাল প্রভৃতি ফলের গাছ এবং হলুদ রঙের তিকোমা ও লালটুকটুকে বাগান বিলাসসহ নানান বাহারী ফুলের গাছ। তার বাগানের ফুল-ফলের আকর্ষণে টিয়া, বুলবুলি, চড়ুঁই, শালিক ও ঘুঘুসহ নানা পাখ-পাখালির ভীড় ও তাদের কিচিরমিচির কলরবে ভোর ও সন্ধ্যাবেলা বাড়িটিতে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সৈয়দ সাইফুল হক সাইফ রাজনৈতিক সচেতন। তিনি বিলেত থেকে বার এট ল' ডিগ্রিধারী সুশিক্ষিত এক আধুনিক মানুষ, তদুপরি কৃষি ও সবুজ প্রকৃতি প্রেম তার সেই পরিচিতিকে ভিন্ন রূপ দিয়েছে। তার এ নয়নাভিরাম ছাদবাগান অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। তিনি মাটি ও মানুষের নেতা বরিশালের (তৎকালীন বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠী আসন) ৩ বারের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ  প্রয়াত সৈয়দ শহীদুল হক জামালের কনিষ্ঠ ছেলে।

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইফুল হক সাইফ জানান, শৈশবকাল থেকেই তিনি কৃষি ও সবুজ প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের প্রতি অনুরক্ত। আর সেই প্রকৃতি প্রেমই তাকে এ ছাদ ও বাড়ির আঙ্গিনায় ফুল-ফল ও ফসলের বাগান গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করেছে।

NJ
আরও পড়ুন