ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

কৃষকদল নেতা হত্যার ঘটনা নিয়ে অপরাজনীতির অভিযোগ

আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২৮ পিএম

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ (৫৫) নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে অপরাজনীতির অভিযোগ উঠেছে। ২ বিএনপি কর্মীর তর্কাতর্কির জেরে এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মামলায় আসামি করা হয়েছে মসজিদের ইমামসহ কয়েকজন জামায়াত নেতাকর্মীকে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ইব্রাহীম হাওলাদার বলেন, গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে করফাকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে স্থানীয় বিএনপি কর্মী দেলোয়ার হোসেন ঘরামীর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় ইউনিয়ন কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফের। একপর্যায়ে দেলোয়ার হোসেন ঘরামী তাকে কয়েকটি থাপ্পর মারেন। এতে আবদুল লতিফ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আল মামুন, ইসমাইল চৌকিদার, হিরু হাওলাদার ও মনিরসহ আরও অনেকে। অথচ দায়েরকৃত মামলাটিতে প্রকৃত প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষী রাখা হয়নি।

তিনি বলেন, আবদুল লতিফকে চড়-থাপ্পর মেরেছে দেলোয়ার। কোন সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা দেখিনি। সেখানে উপস্থিত অন্যান্যরা উভয়কে ছাড়িয়ে দিয়েছে। আমি নিজে আবদুল লতিফকে হাসপাতালে নিতে সাহায্য করেছি। অথচ মামলায় আমাকেও আসামি করা হয়েছে। তাছাড়া জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে আসামি করা হয়েছে, যারা আদৌ সেদিন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। এমনকি মসজিদের ইমাম সাহেবকেও আসামি করা হয়েছে।

এই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, অভিযুক্ত দেলোয়ার একজন বিএনপি কর্মী। গত ৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠন অনুষ্ঠানে তার ছিল সরব উপস্থিতি। সেই ছবি এখনো অনলাইন ও ফেসবুকে রয়েছে।

করফাকর বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আবদুল লতিফ ভাই আমার মসজিদের মুসল্লী ছিলেন। আসরের নামাজের পর মারামারির সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু ততক্ষণে লতিফ ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। অথচ আমাকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে রমরমা মামলা বাণিজ্য।

নিহতের পরিবারকে জিম্মি করে মামলায় নিরীহ জামায়াতের লোকদের আসামি করে এই বাণিজ্য করছে একটি মহল। এ ঘটনায় অসংখ্য নির্দোষ পুরুষ এখন বাড়ি ছাড়া।

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আল মামুন বলেন, যেহেতু মামলা হয়েছে। তাই অযথা এই মুহুর্তে কোন কথা বলে বিপদে পড়তে চাই না। কেননা এলাকায় অনেকেই এখন আতঙ্কে আছে।

সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মোহাম্মদ ফেরদাউস বলেন, ঘটনার দিন আমি ছিলাম উজিরপুরে। সেখান থেকে আমি এলাকায় ফিরে মৃধাবাড়ি মসজিদে আসরের নামাজ পড়ি। এরপর শুনতে পাই করফাকর স্কুল প্রাঙ্গণে মারামারি হয়েছে। আমি আদৌ ঘটনাস্থলেই যাইনি। অথচ আমিসহ জামায়াতের নায়েবে আমির হাফেজ নাজিমউদ্দিন ও যুব জামায়াতের নেতা জাহিদুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপি নেতারা আমাদের আসামি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এলাকায় দফায় দফায় মিছিল বের করে।

তিনি আরও বলেন, মামলায় বাদীপক্ষকে জবরদস্তি করে জামায়াতের লোকদেরকে আসামি দিয়েছে বিএনপি নেতারা। এতে একদিকে নিরীহ লোকজন হয়ারানি হচ্ছে। অপরদিকে হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া অভিযুক্ত দেলোয়ার একজন বিএনপি কর্মী। তাকে এখন জামায়াত সাজিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন জামায়াতের নায়েবে আমির হাফেজ নাজিম উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি ঘটার অনেক সময় পরে আমি খবর পেয়েছি। অথচ আমাকেও আসামি করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা এটিকে নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। তারা নিহতের পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে নির্দোষ লোকগুলোকে আসামি দিয়েছে। জামায়াতের উপরে দায় চাপিয়ে তারা রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।

মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রী পারভীনা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ৩ জন আসামির নাম দিয়েছি। এই ৩ জনের মধ্যে জামায়াতের কারো নাম ছিল না, অন্যান্য নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতারা বলতে পারবেন। আমি ন্যায় বিচার চাই।

এ বিষয়ে সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, যেসব লোকদের আসামি করা হয়েছে তারা অনেকে ঘটনাস্থলে ছিল, অনেকে কাছাকাছি ছিল। কেননা আসামিরা সকলেই করফাকরের বাসিন্দা। আমরা এটা নিয়ে রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকলে তো পুরো উপজেলা জামায়াতের লোকজনকে আসামি দিতে পারতাম, তা তো দেইনি।

বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মৃধা বলেন, আমরা এটা নিয়ে কোন রাজনীতি করছি না। ভুক্তভোগী পরিবারকে সহযোগিতা করছি। কেননা আবদুল লতিফ ছিল দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা। হত্যাকারী দেলোয়ার বিএনপির কর্মী নয়, সে জামায়াতের সমর্থক বলে মন্তব্য করেন রিয়াজ মৃধা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আরাফাত হাসান বলেন, মামলাটি তদন্তনাধীন আছে। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বানারীপাড়া থানার ওসির দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শতদল মজুমদার বলেন, হ্যাকাণ্ডের পর ভুক্তভোগী পরিবার মামলা দিয়েছে। আসামি ও স্বাক্ষীদের নাম তারাই দিয়েছে। তবে কোন নির্দোষ ব্যক্তি আসামি হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই আমরা প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনবো।

প্রসঙ্গত, সৈয়দকাঠি ইউনিয়ন কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হত্যাকান্ডের শিকার হন। রোবাবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিহতেরর স্ত্রী পারভীনা বেগম বাদী হয়ে ৩ জামায়াত নেতাসহ ৯ জনকে সুনির্দিষ্ট ও বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে মামলার এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামি তুহিনকে ভোলা শহর থেকে র‌্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়।

NJ
আরও পড়ুন