ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

গোপালগঞ্জে সহিংসতা: নতুন মামলায় আসামি সাড়ে ৫ হাজার, মামলা বেড়ে ১৩

আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলার ঘটনায় এবার সব থেকে বেশি সংখ্যক আসামি উল্লেখ করে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৫ হাজার ৪৪৭ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে মোট ১৩টি মামলা দায়ের করা হলো। 

গোপালগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মির মো: সাজেদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক মো: মতিয়ার মোল্লা বাদী হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় (২৯ জুলাই) সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। ৪৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৫০০০ নেতাকর্মীকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, গোপালগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী লিয়াকত আলি লেকু, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএম মাসুদ রানা, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখ, সাবেক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহিদ মাহামুদ বাপ্পি, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতিশ রায়, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান বিটু, মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ আলী আশরাফ, শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নাঈম খান (জিমি), ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ করার জন্য গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে সমাবেশস্থল নির্ধারণ করে। এ সমাবেশকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং জনসাধারণের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। আসামিরা রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে। এছাড়া ষড়যন্ত্রে সাহায্য, সহায়তা, অর্থায়ন ও প্ররোচিত করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধাদান ও সরকারি কর্মচারীদের আক্রমণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করে যৌথবাহিনীর সদস্যদের মারপিট ও গুরুতর জখম করে।

এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যার ঘটনায় মোট ১৩টি‌ মামলা করা হলো। গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করা হয়। ১৩টি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গত ১৬ জুলাই এনসিপির সমাবেশস্থলে এবং গোপালগঞ্জ থেকে মাদারীপুর ফেরার পথে শহরের লঞ্চঘাট নামক এলাকায় তাদের গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন। আহত হন আরো অর্ধশতাধিক।

ঘটনার দিন জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জের থানাপাড়া এলাকার রমজান মুন্সী (৩৫), শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫), সদরের ভেড়ার বাজার এলাকার ব্যাপারীপাড়ার ইমন তালুকদার (১৭), টুঙ্গিপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) ও সদরের বিসিক এলাকার রমজান কাজী (১৮)।

প্রসঙ্গত, ১৬ জুলাই (বুধবার) এনসিপির জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। পরে পরিস্থিতি অবনতির কারণে ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়।

পরদিন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রথম দফায় কারফিউয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করেন।

এর মধ্যে শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় কারফিউর মেয়াদ বাড়িয়ে শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্যকর রাখা হয়। এরপর ১৪ ঘণ্টা শিথিল রেখে রাত ৮টা থেকে রোববার (২০ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউর মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই দিন রাতে কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়।

NJ
আরও পড়ুন