মানিকগঞ্জের সিংগাইরে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে বলতে চা বিক্রি করেন ইংলিশম্যান খ্যাত অষ্টম শ্রেণি পাস রফিকুল ইসলাম। ভুল কিংবা ঠিক নিয়ে নেই কোনো মাথাব্যথা। মজার ইংরেজিতে চলে তার চা বিক্রি।
জানা যায়, জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ দিন প্রবাসে ছিলেন রফিকুল। দেশে ফিরে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও অবশেষে তিনি স্থায়ীভাবে চায়ের ব্যবসায় শুরু করে। উপজেলার চারিগ্রাম নতুন বাজারে সবার প্রিয় ভাজন রফিকুল এভাবে ইংরেজিতে কথা বলায় এখন ইংলিশম্যান নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
সৎ ও সহজ-সরল আচরণের কারণে অন্য সব চা বিক্রেতাদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি আয় করেন তিনি। প্রতিদিন প্রায় ২ শতাধিক কাপ চা বিক্রি করে ২-৩ হাজার টাকা আয় করেন। কোন ক্রেতার কাছ থেকে কখনো বেশি দাম নেওয়া হলে, তা পীড়া দেয় তাকে। ফেরত দেন ক্রেতাদের অতিরিক্ত বিল।
ক্রেতা আসলেই আগতদের হাসিমুখে ইংরেজি ভাষায় স্বাগত জানিয়ে চায়ের অর্ডার নেন তিনি। ইংরেজিতে কথা বলতে বলতে বিভিন্ন ধরনের চা তৈরি করেন অষ্টম শ্রেণি পাস রফিকুল। ক্রেতারা প্রশংসা করলে তিনি পুনরায় ইংরেজিতে সাধুবাদ জানান। সব সময় ইংরেজিতে কথা বলায় রফিকুলকে স্থানীরা ইংলিশম্যান বলেই ডাকেন।

সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করায় তাকে সবাই পছন্দ করেন। চা বানাতে বানাতে গলা ছেড়ে ভালো গানও গান রফিকুল। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ১৯৯১ সালে বিদেশে যান তিনি এবং ২০০৭ সালে দেশে ফিরে হোটেল বয়, বাবুর্চিসহ সবজি বিক্রির কাজ করেছেন। নিজের আত্মমর্যাদাকে টিকিয়ে রাখতে নিজ উদ্যোগে ইংরেজি ভাষা শিখতে শুরু করেন রফিকুল।
এদিকে চা বিক্রেতা রফিকুলের এমন ইংরেজি বলাকে সাধুবাদ জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
চারিগ্রাম বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল সালাম বলেন, আমরা যখন দোকানে চায়ের অর্ডার দেই, রফিকুল ইসলাম তখন ইংরেজি ভাষায় কথা বলে এবং চা দেয়। প্রথম দিকে বিরক্তিকর মনে হলেও এখন তার ব্যবহার ও সততা দেখে আমরা সকলেই মুগ্ধ।
সাব্বির নামের এক যুবক বলেন, ইংলিশম্যানের চায়ের দোকানে গেলে তিনি সকল ক্রেতাকেই স্বাগত জানান এবং প্রায় সময়ই ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করেন। আমার সঙ্গে তিনি ইংরেজিতে কথা বলেন, আমিও তার সঙ্গে একইভাবে ভাব বিনিময় করি। এতে তিনিও অনেক খুশি হন। তবে ভুল বা শুদ্ধ বলে কথা নেই। তিনি যে চেষ্টা করেন এটাই প্রশংসার দাবিদার।
ইংলিশম্যান খ্যাত রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি আমাদের চারিগ্রাম হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। আর্থিক অনটনের কারণে বিদেশ গিয়েছি এবং দেশে ফিরে হোটেল বয়, বাবুর্চিসহ সবজি বিক্রির কাজ করেছি। পরে আমি চারিগ্রাম বাজারে চায়ের দোকান দেই এবং প্রতিদিন দুই শতাধিক কাপ চা বিক্রি করে ২ হাজার টাকা আয় করি। আমার দোকানে যারাই আসে, তাদের প্রত্যেককেই ইংরেজি ভাষায় স্বাগত জানাই। অনেক সময় আগত ক্রেতারাও আমার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলেন। মাঝে মাঝে অনেক ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিলে, বিষয়টা আমাকে প্যারা দেয়। অতিরিক্ত টাকা ফেরত না দিলে ভালো লাগে না। এভাবে ইংরেজিতে কথা বলায় আমার নাম রফিকুল ইসলাম ঢাকা পড়েছে, সবাই ইংলিশম্যান নামে আমাকে চিনেন।
সিংগাইর চারিগ্রাম বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ বলেন, আমাদের এই বাজারে ইংলিশম্যান খ্যাত রফিকুলকে সবাই পছন্দ করেন, শুধু মাত্র তার সততা দেখে। তিনি সব সময় তার দোকানের ক্রেতাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন এবং প্রতিনিয়তই ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করেন। অন্য দোকানের চেয়ে তার ক্রেতার সংখ্যা অনেকটাই বেশি, শুধুমাত্র তার ব্যবহারের জন্য।
