গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি স্বর্ণের দোকানে প্রকাশ্যে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ওই দোকান থেকে দুই কোটি ৫৬ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার, নগদ ৫ লাখ টাকা লুটে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। লুটপাটের ঘটনার কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তায় মসজিদ গলিতে রিতা জুয়েলার্সের দোকানের সাটারের তালা কেটে লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিষয়টি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সামাজিক মাধ্যমের প্রকাশ পাওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (সকাল ১০টা ২৪ মিনিটে শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তায় মসজিদ গলিতে গৌরাঙ্গ দাসের মালিকানাধীন রিতা জুয়েলার্সের স্বর্ণের দোকানের সামনে পায়েল সরকার নামে এক নারী এসে দাঁড়ান। কিছু সময় পর ওই নারীর সাথে কয়েকজন যুবক যোগ দেন। পরে ওই নারীর নেতৃত্বে রিতা জুয়েলার্সের দোকানে সাইনবোর্ড টেনে নামাতে দেখা যায়।
এরপর তালা কাটারগ্রাইন্ডিং মেশিন দিয়ে ওই যুবকরা সাটারের তালা কেটে ফেলেন। পরে সাটার দুটি তুলে দোকানের ভেতরে ঢুকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি দোকানের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র বাইরে আনতে নির্দেশনা দেন। এ সময় পায়েল সরকার ও তার সহযোগীরা দোকানের ভেতরের মালামাল বের করে আনা শুরু করেন। দোকানে থাকা সিন্দুক বাইরে আনা হয়। পাশাপাশি একটি শপিং ব্যাগে করে দোকানে থাকা স্বর্ণালংকার সরিয়ে নেওয়া হয় বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন।
এ সময় শোকেসে থাকা ৩২ লাখ টাকার ১৬ ভরি স্বর্ণ, সিন্দুকে থাকা ১ কোটি ৯২ লাখ টাকার স্বর্ণ, নগদ ৫ লাখ টাকা ও ১৩০০ ভরি ৩২ লাখ ৫০হাজার রূপা লুট করে। পরে ওই দোকানের সামনে সুব্রত চন্দ্র দাস নামে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়।
ভুক্তভোগী রিতা জুয়েলার্সের মালিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, দোকান বন্ধ রেখে একটি মামলায় হাজিরা দিতে আমি আদালতে ছিলাম। হঠাৎ আমার আরেক দোকানের কর্মচারী সাটার কাটার বিষয়টি আমাকে জানায়। পরে এসে দেখি আমার দোকানে থাকা সমস্ত স্বর্ণ, রূপা ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। বাইরে দোকানের আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখি।
এই ব্যবসায়ী আরও জানান, সিসিটিভিতে ফুটেজে থাকা ওই নারী প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ সরকারের দ্বিতীয় স্ত্রী পায়েল সরকার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে তাদের ব্যবহার করে পায়েল দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, দখলবাজি ও লুটপাটসহ নানা ধরনের অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, দিনে দুপুরে স্বর্ণের দোকানে তালা কেটে লুটপাটে ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এক প্রকার অনিশ্চয়তায় সন্ধ্যার পরপরই ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছেন।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানান, আমি এসে দেখি তারা অনেকেই দোকানের ভেতরে রয়েছে। দলবল নিয়ে এসে তারা প্রকাশ্যে দোকানের মালামাল বের করেছে। আমরা সবাই আতঙ্কিত ছিলাম তখন।
স্থানীয় হেলাল উদ্দিন বলেন, জমিটি আমি ২০১২ সালে কিনে গৌরাঙ্গ দাসকে দোকান করে ভাড়া দিয়েছিলাম। পরে একই মালিকের ছেলের কাছ থেকে সুব্রত দাস ২০২১ সালে এটি ক্রয় করে। মামলাটি আদালতে চলছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও পায়েল ও সুব্রতর নেতৃত্বে দোকান ভেঙ্গে লুটপাট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পায়েল সরকার বলেন, সেখানে আমিসহ আরও হাজার হাজার মানুষ ছিলেন। আমার নেতৃত্বে লুটপাটের বিষয়টি মিথ্যা। যার জমি তার নেতৃত্বেই হয়েছে।
এভাবে তালা কেটে আরেকজনের মালামাল লুট করার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে অভিযুক্ত সুব্রত চন্দ্র দাস বলেন, আপনি সামনাসামনি আসুন, কাগজপত্র দেখুন। মুঠোফোনে কোনো বক্তব্য দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, এ ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজবাড়ীতে স্বর্ণের দোকানে দুর্ধর্ষ চুরি, গ্রেপ্তার ১
আশুলিয়ায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি, ব্যবসায়ী নিহত
কলাপাড়ায় এবার স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ