ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

গরু-ছাগলের দেখাশোনায় দিনমজুরের শিয়াল পালন

আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সূর্য নারায়ণপুর গ্রামের কাওলার টেক এলাকায় এক ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। সেখানে দিনমজুর গিয়াসউদ্দিন (৪০) নামের এক ব্যক্তি পালন করছেন একটি শিয়াল, যেটি নাকি এখন তার বাড়ির মোরগ, ছাগল এমনকি গরুর দেখাশোনা করে!

গিয়াসউদ্দিন পেশায় দিনমজুর হলেও প্রাণীপ্রেম থেকেই শুরু করেন এই অদ্ভুত শখের পালন। বর্তমানে তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই বলছেন—মানুষ যদি ভালোবাসা দেয়, তবে বন্য প্রাণীও হতে পারে ঘরের বন্ধু।

গতকাল বিকেলে গিয়াসউদ্দিন জানান, প্রায় এক বছর আগে বনে আহত অবস্থায় ২ মাস বয়সী একটি শিয়ালছানা পান তিনি। অসুস্থ অবস্থায় সেটিকে বাড়িতে এনে যত্ন করে সুস্থ করে তোলেন। এরপর থেকে শিয়ালটি তার অন্যান্য পালিত প্রাণীর সঙ্গে একসাথেই বাস করছে।

গিয়াসউদ্দিন বলেন, প্রথমে শিয়ালটি খুব ভয় পেত, কিন্তু এখন পুরোপুরি অভ্যস্ত। মোরগ-ছাগলের মতোই খাবার দিই—মাছ, মাংস যা পায় তাই খায়। এখন ও আমাকে চিনে ফেলেছে, আমি ডাকলে সাড়া দেয়। আমি বাজারে বা কাজে গেলে ও যেতে চায়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গিয়াসউদ্দিনের বাড়িতে প্রতিদিন অনেকেই আসেন “পোষা শিয়াল”টি দেখতে। মহাসড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বনের ধারে তার বাড়িতে দেখা যায়, বৃষ্টিতে ভিজে গিয়াসউদ্দিন কলা বাগানে কাজ করছেন, পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার শিয়ালটি।

গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমি কোনো ব্যবসার জন্য শিয়াল পালন করি না। ওকে আমি সন্তানের মতো ভালোবাসি। জঙ্গলে দিয়ে আসলেও দৌঁড়ে বাড়িতে ফিরে আসে। রাতে দেরি হলে বাড়ির কোণে বসে আমার অপেক্ষা করে। মানুষ আমাকে পাগল বলে, কিন্তু আমি শুধু ওকে ভালোবাসি।

তিনি জানান, প্রতিদিন শিয়ালের খাবারের জন্য কিছুটা খরচ হয়। কেউ গরু বা ছাগল জবাই করলে সেখান থেকে অল্প মাংস কিনে আনেন। মাঝে মাঝে মাছও কিনতে হয়।

পাবুর গ্রামের লিটন মিয়া বলেন, গিয়াসউদ্দিনের শিয়াল ক্ষতি করে না। বরং মোরগ ও ছাগল দেখাশোনা করে। ওর বাড়িতে গিয়াসউদ্দিন ছাড়া কেউ নেই, তাই শিয়ালটিই যেন তার সঙ্গী।

এ বিষয়ে শরীফ মোমতাজ উদ্দিন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রাণী বিশেষজ্ঞ তাজ উদ্দীন আহমদ বলেন, শিয়াল বন্য প্রাণী, তাই ঘরে পালন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে যত্ন ও পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ থাকলে এটি মানুষের সংস্পর্শে থাকতে পারে।

কাপাসিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিয়াল হিংস্র ও বন্যপ্রাণী। এটি পালন করতে হলে টিকাদান ও পর্যবেক্ষণ জরুরি। এছাড়া বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।

NJ
আরও পড়ুন