ঢাকা
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

আলফাডাঙ্গায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরালেন ইউএনও

আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমাতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার এই ব্যক্তিগত আগ্রহ ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ফলে আনন্দের সঙ্গে বিদ্যালয়ে এসে অধ্যয়ন করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
 
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় স্কুলমুখী করতে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ও সামগ্রী বিতরণসহ নানা আয়োজন করছেন তিনি। ইউএনওর এই সক্রিয় ভূমিকায় অভিভাবক ও স্থানীয়রা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
​সরেজমিন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউএনও রাসেল ইকবাল আলফাডাঙ্গায় যোগদানের পর থেকেই প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণের চেষ্টা শুরু করেন। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও ঝরে পড়ার হার রোধে সংশ্লিষ্ট সকলকে সাথে নিয়ে তিনি নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন, মা সমাবেশ এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে আসছেন।
 
 
এলাকার সুধীজন, অভিভাবক, শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে গ্রহণ করেন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। ​​ইউএনও তার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিক্ষকদের মাসিক সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করে তুলেছেন। এছাড়া তিনি শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতেও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
 
উপজেলায় বিভিন্ন সাব-ক্লাস্টারে আয়োজিত পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সে শিক্ষকদের পারদর্শিতা ও সক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত মনিটরিং শুরু করেছেন। আকস্মিক স্কুল পরিদর্শন করে ছাত্র-শিক্ষক উপস্থিতির হার পর্যবেক্ষণ ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে যুগোপযোগী পাঠদানের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
​উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএনও রাসেল ইকবাল গত ২১ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপজেলার চরাঞ্চলের দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া টেলিভিশন, ৩টি ল্যাপটপ ও পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেয়াল ঘড়ি বিতরণ করেন। এরপর গত ২০ মে মধুমতী নদীর ওপারে দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থিত দিগনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুল ব্যাগ, খাতা-কলম ও পরীক্ষার ফোল্ডার বিতরণ করেন। নদীভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র ও মেধাবী শতাধিক শিক্ষার্থীকে জুতাসহ স্কুল ড্রেস এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের কমপক্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীকে খাতা-কলম ও ছাতা বিতরণ করেছেন।
 
 
এছাড়া ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি ও আইসিটির দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অন্তত ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রিন্টার বিতরণ করা হয়। গত ৪ মাসে সবমিলিয়ে উপজেলার কমপক্ষে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭০০-৮০০ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা ও ক্রীড়া উপকরণ বিতরণ করেছেন ইউএনও রাসেল ইকবাল।
​ইউএনওর এই উদ্যোগ সম্পর্কে চরখোলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে আসছিল। কিন্তু ইউএনও স্যার নিয়মিত পরিদর্শন করছেন এবং শিক্ষার্থীদের হাতে সরাসরি শিক্ষা উপকরণ তুলে দিচ্ছেন।
 
তার এই সহযোগিতা ও আন্তরিকতার কারণে স্কুলে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি যেমন বেড়েছে, তেমনি শিক্ষকদেরও দায়িত্ববোধ অনেক বেড়েছে। এই উদ্যোগ আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে সত্যিই পাল্টে দিয়েছে। ​ইউএনওর এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগগুলো সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে।
 
 
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শমসের উদ্দীন টিটো বলেন, আলফাডাঙ্গায় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে ইউএনও মহোদয়ের নানামুখী কর্মসূচি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। ইতোপূর্বে কোনো ইউএনওকে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখিনি।
 
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এলাকার অসহায় ও হতদরিদ্র শিশুরা এখন নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসায় উপস্থিতির হারও বাড়ছে।
 
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, একটি জাতিকে উন্নত করতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই শিক্ষার উপর বিশেষ নজর দিয়েছি আমি। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ শিক্ষার বুনিয়াদ শুরু হয় প্রাথমিক স্তরে। যদি সফলভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষার আগ্রহ সৃষ্টি এবং শিক্ষার সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়, তবেই টেকসই উন্নয়ন সাধিত হবে।
NJ
আরও পড়ুন