সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল ও মোংলা উপজেলা। এই ৪টি উপজেলার বেশির ভাগই নদ-নদী দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই অথৈ পানি। তবে, সে পানি খাবার বা রান্না করার মোটেই উপযোগী নয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের জলোচ্ছ্বাসে যে টুকু মিষ্টি পানির জলধারা ছিল তাও লবণাক্ত পানিতে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, আগে থেকেই বাগেরহাটের এই ৪টি উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানি তিব্র লবণাক্ত হওয়ায় গভীর ও অগভীর নলকূপের পানিও খাবার উপযোগী নয়। পানিতে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা ১০০০ হাজার পিপিটি হয়েও বাগেরহাটের এই ৪টি উপজেলার পানিতে লবণাক্তকার পরিমাণ এখন ৪ হাজার পিপিটি। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যায়। তাই এই ৪ উপজেলার বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠির ৮ লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে সুপেয় পানির তিব্র সংকটে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুকুরের পানি বিশুদ্ধ করার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা পিএসএফ ও টিউবওয়েলগুলো। ফলে জেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল, ও মোংলা উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। যার কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে লবণ পানি পান করছেন।

এদিকে, লবণ পানি পান ও ব্যবহার করায় চর্মরোগ ও পেটের পীড়া দেখা দিয়েছে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের। কেউ কেউ জীবন বাঁচাতে দূর-দূরান্ত থেকে পানি কিনে আনছেন। ঝড়ের তাণ্ডব শেষ হওয়ার পর জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাওয়া গেলেও, সুপেয় পানির কোনো সরবরাহ ছিল না দুর্গত এলাকায়। যার কারণে সরকারিভাবে নদী তীরবর্তী এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক বলেন, মোরেলগঞ্জ, শরণেখোলা ও মোংলা উপজেলায় তিনটি ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে দুর্গত মানুষদের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন ১২ হাজার লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটি চলবে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, এই পানিতে আসলে সংকট মিটবে না। এটা উপজেলার একটি জায়গায় দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় যেতেও পারছে না। সুপেয় পানির সংকট মেটানোর জন্য ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
