সাতক্ষীরা শহরের অধিকাংশ সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন সাতক্ষীরা শহরবাসী।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এভাবে যেখান-সেখান আবর্জনা ফেলার কারণে শহরের পরিবেশ যেমন বিষাক্ত হয়ে উঠবে, তেমনি নগরবাসী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে।
তবে এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ বলেছেন, নাগরিক সচেতনতার অভাবে শহরের পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। পৌর ডাস্টবিন থাকার পরও ময়লা-আবর্জনা সেখান না ফেলে সাধারণ মানুষজন রাস্তায় উপর ফেলছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের কলেজ রোডের মাঝখানে, ইটাগাছা হাটরমোড় সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের উপর, সুলতানপুর বড় বাজারের প্রবেশদ্বার, প্রেসক্লাব সড়ক, নারকেলতলা ব্রিজ সড়ক ও সার্কিট হাউস সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনার স্তুপ।
এই এলাকার বাসিন্দা রবিউল জানান, বিভিন্ন বাসাবাড়ির লোকজন পলিথিনে করে ময়লা-আবর্জনা মোটরসাইকেলে এনে এসব রাস্তার উপর ফেলে দিয়ে যাচ্ছে।

ইটাগাছা মহল্লার বাসিদা গোলাম হোসেন জানান, তাদের মহল্লার একপাশে সুলতানপুর বড়বাজার, অন্যপাশে ইটাগাছা হাট। এছাড়া অন্যান্য সরকারি দপ্তর রয়েছে। কিন্তু এখানে আবর্জনা ফেলার জন্য পৌরসভার কোনো ডাস্টবিন নেই। ফলে সাধারণ বাসিন্দাদের দৈনন্দিন ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না।
এ ব্যাপার পৌর কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়ও কোনো লাভ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই রাস্তার পাশ ফেলতে হচ্ছে ময়লা-আজর্বনা।
সুলতানপুর বড়বাজার সংলগ্ন দিবানৈশ্য কলেজের ছাত্র ফাইয়াদ, শহিদুল ও ফয়সাল আহমেদ জানান, কলেজে ঢোকার মুখে বিশাল ময়লা-আবর্জনার স্তুপ পড়ে আছে। কাঁচাবাজারের সারাদিনের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় রাস্তার ওপরে। এতে প্রতিদিন কলেজে যাওয়া-আসার সময় প্রচন্ড দুর্গন্ধ সহ্য করত হয় এই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলা সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল জানান, যত্রতত্র রাস্তার উপর ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে শহরের পরিবেশ মারাত্মক দূষিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ওই ময়লা-আবর্জনা পঁচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করছে। এতে শহরবাসী মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ কর্মকর্তা আরো বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ময়লা ফেলার ব্যবস্থাপনার দাবি জানান পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট।
সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির সদস্য স্বপন শীল জানান, কাগজ-কলমে সাতক্ষীরা এক নম্বর পৌরসভা। কিন্তু বাস্তব চিত্রটি ভিন্ন। এখানে নাগরিকরা তাদের ন্যূনতম নাগরিকসেবা পান না। নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্ষা হলেই হাঁটুপানি জমে যায় রাস্তার ওপরে, প্রায় প্রতিটি রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। আর শহরের বিভিন্ন সড়কের উপর ময়লা-আবর্জনা স্তুপ আকারে পড়ে আছে। ফলে পরিবেশ হুমকির মুখে বলে তিনি জানান।

অপ্রতুল ডাস্টবিনের কথা স্বীকার করে সাতক্ষীরা পৌরসভার পরিছন্ন পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী জানান, ৯টি ওয়ার্ডর জন্য কমপক্ষ ১৫০টি ডাস্টবিন প্রয়োজন। কিন্তু রয়েছে প্রায় ৫০টি। যে ৫০টি রয়েছে তাতেও ময়লা-আর্জবনা না ফেলে নাগরিকরা বাইরে বা রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা ফেলেন। তাছাড়া ময়লা-আবর্জনা পরিবহনের জন্য যে পরিমাণ যানবাহনের দরকার, সেটি পৌরসভার নেই। কমপক্ষ ৬টি যানবাহন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২টি। তাও মাঝেমধ্যে ত্রুটি দেখা দেয়।
তিনি আরো বলেন, শহরের পরিবেশ ভালো রাখতে আগে নাগরিকদের সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। ডাস্টবিনে ময়লা না ফেলে কীভাবে বাইরে ফেলেন? এছাড়া শহরের ডোর-টু ডোর ময়লা সংগ্রহের দায়িত্ব আছেন সুন্দরবন ফাউন্ডেশন নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
মাসে নামমাত্র কিছু খরচ নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের লোকজন ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মাস শেষে এই সামান্য খরচটাও দিতে চান না অনেকে। আবার বাড়ির মালিক-ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ময়লা ফেলার খরচ নিয়েও অনেকে পরিচ্ছনকর্মীদের টাকা দেয় না।
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি পৌরসভার মধ্যে ডাস্টবিন স্থাপনে বাধা দিয়েছেন বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। ফলে উভয় সংকটে রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
