স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢল দেখেছে শেরপুরবাসী। টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বানভাসিদের প্রায় সাত হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নির্ঘুম রাত্রি যাপন করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার। আর ভাঙা ঘর মেরামতে আর্থিক সংকটে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তরা। প্রয়োজন আর্থিক অনুদান।
প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করাসহ টিন ও অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইগাতীর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল জানান, প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যে এ উপজেলায় ৫০০ ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত এবং এক হাজারের মতো ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।
নালিতাবাড়ীর ইউএনও মো. মাসুদ রানা বলেন, এ উপজেলায় ৪ হাজার ৬৮টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও প্রায় ১ হাজার ২০০ ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবছর বর্ষায় দুই তিনবার ঢলে ভাসলেও ইতিপূর্বে এমন তাণ্ডবলীলা কেউ দেখেনি আগে। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে ৪টি নদী পাড়ের মানুষ কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সব লন্ডভন্ড করে দেয়। পানি কমতেই ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। এ বন্যায় জেলার ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্তত সাত হাজার কাঁচা, আধা পাকা, পাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জেলার পৌনে দুইলাখ কৃষকের। ঢলের স্রোতের সামনে যা যা পড়েছে সব মিশিয়ে দিয়েছে মাটির সাথে, নয়তো নিয়ে গেছে ভাসিয়ে। সব হারিয়ে দিশেহারা এসব পরিবার। আর এঘর মেরামতে আর্থিক সংকটে থাকায় হিমশিম খাচ্ছে বানভাসিরা।
পানি কমায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়ি ফিরেছে মানুষ। ঘর না থাকায় খোলা আকাশের নীচেই অবস্থান নিতে হচ্ছে তাদের।
নালিতাবাড়ীর খলিশাকুড়া গ্রামের হারুন মিয়া বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে তার ঘরবাড়িসহ সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে খোলা আকাশের নিচে নির্ঘুম রাত্রি যাপন করছি।
ঝিনাইগাতীর নলকুড়া গ্রামের আমিনুল বলেন, আমার ৪টা ঘর আছিল সব নিয়া গেছে ঢলে। আমরা মহারশী নদী পাড়ে থাকি তাই আমাদের ক্ষতি বেশি হইছে। আমাদের চালের ওপর দিয়া পানি গেছে।
ঝিনাইগাতীর নলকুড়া গ্রামের আমেনা বেগম বলেন, আমি কাজ করে খায়। আমার ঘরের কিছু থয় নাই। সব ভাসায় নিয়া গেছে গা। আমরা ভোর রাতে ওইঠা দেহি ঢলের পানি আইছে। পরে পানি যহন বাড়তাছে তহন ঘরের জিনিসপাতি টান দিবার ধরছি ঐসময় দেহি মেলা পানি আইতাছে। পরে নিজের জীবনডা নিয়া বাঁচছি খালি। আমরা সরকারের কাছে ধনী মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তা চাই। আমাদের কামায় রোজগারের জমির ফসলও শেষ।
বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থা আর্থিক সহায়তার হাত বাড়ালেও তার পরিমাণ বাড়ানো ও সকলের এগিয়ে আসার দাবি বানভাসিদের। আর এদিকে সরকারি সহায়তাও বাড়ানোর দাবি তাদের।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ শুরু করা হবে।
