জীবন মানেই সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে লড়ে যাচ্ছেন বাগাতিপাড়ার এক অদম্য নারী মানিকজান বিবি। নাটোরের বাগাতিপাড়ায় জামনগর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের এই নারী নিজের পরিশ্রমে আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন জীবনের চাকা।
অনেক বছর আগে স্বামীকে হারান মানিকজান। তখন একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসেন বাবার ঘরে। কিছুদিনের মধ্যেই বাবাও মারা যান। এরপর শুরু হয় তার কঠিন দিনযাপন। সংসারে অভাব, না খেয়ে থাকা, কষ্ট—সবকিছুর মধ্যেও তিনি হার মানেননি।
মেয়েকে বড় করেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, অবশেষে বিয়ে দিয়েছেন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী। এখন মেয়ে ও জামাই আলাদা সংসারে সুখে আছেন।
মানিকজানের এখন বয়স হয়েছে অনেক, তাই হাঁটা-চলায় ধীরগতি এসেছে। কানে কম শোনেন, চোখেও ঝাপসা দেখেন। তবু বসে থাকেন না। এখনও কাঁথা ও লেপ সেলাইয়ের কাজ করে নিজের খরচ নিজেই চালান তিনি।

প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে সূঁচ-সুতা হাতে বসেন কাজে। একদিনে তিনি দুইটি কাঁথা ফোঁড়তে পারেন। প্রতিটি কাঁথার জন্য মজুরি পান ১০০ টাকা। এই সামান্য টাকাতেই তিনি খাবার ও কাপড়ের খরচ মেটান।
জামনগর কুঠিপাড়া এলাকার এক গৃহিণী বলেন, মানিকজান আপা খুব পরিশ্রমী মানুষ। খুব অল্প টাকায় তিনি কাঁথা আর লেপ সেলাই করেন। তার হাতে করা কাঁথাগুলো দেখতে দারুণ সুন্দর হয়।
মানিকজান বিবির হাতে এখনো সেই নিপুণতা। বয়সের ভারে ক্লান্ত হলেও তার মন ভাঙেনি। জীবনের কষ্টকে হাসিমুখে জয় করেছেন তিনি। প্রতিদিন সূঁচে সুতার ফোঁড় তোলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন দিচ্ছেন এক জীবন পাঠ— পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে বয়স বা অভাব কোনো বাধাই নয়।
