তিস্তার পানি কমলেও লালমনিরহাটে বানভাসি মানুষের ভোগান্তি কমেনি। এখনো এ জেলার কয়েক হাজার পরিবার পানিন্দি রয়েছে। তারা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছেন বানভাসি মানুষজন।

এদিকে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি হু হু করে দহগ্রামে ঢুকে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানির তোড়ে আঞ্চলিক পাকা রাস্তার প্রায় ৭ কিলোমটিার ও একটি সেতু এবং দুইটি কালভার্ট ভেঙে গেছে। প্রায় ১০ হেক্টর জমির আমন ধান, বাদামসহ অন্যান্য সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
দেশের সর্ববৃহ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একই পয়েন্টে সোমবার গভীর রাতে পানি ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
পানি বৃদ্ধিতে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে দেখা দেয় বন্যা। অসময়ের বন্যায় হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, গড্ডিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদী তীরবতী নিম্নাঞ্চলগুলোর প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তবে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তিস্তার পানি কমে গেলেও এখনো প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

বসত বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষ। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। ঘরবাড়িতে পানি উঠায় রাস্তায় চুলা জ্বালিয়ে কেউ করছেন রান্নার কাজ, আবার কেউ ওই রাস্তার ধারে একচালা ঘর করে গরু ছাগল নিয়ে একই ঘরে বিছানা পেতেছেন।
তবে এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার পাটগ্রাম উপজেলা দহগ্রাম ইউনিয়ন। তিস্তার পানিতে এ ইউনিয়নের ১, ৪, ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তিস্তা চরাঞ্চলসহ কলোনিপাড়া, মুন্সিপাড়া, ক্লিনিক পাড়া, কাদেরের চর, মহিমপাড়া, চরপাড়া, কাতিপাড়া, সৈয়দপাড়া, গুচ্ছগ্রাম, বড়বাড়ি, নতুনহাট, হাড়িপাড়া এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে।
পানির তীব্র স্রোতে কলোনিপাড়া ও স্বাধীন বাংলা চত্বর এলাকার পাকা সড়ক ভেঙে যায়। দহগ্রামের ১নং ওয়ার্ডের চিষ্টিয়ারপাড় এলাকার সাকোয়া নদীর উপর নির্মিত সেতুর দুইদিকের সংযোগ সড়ক, কলোনিপাড়ার দুইটি কালভার্ট ভেঙে যায় এবং ৪ ও ৬নং ওয়ার্ডের বঙ্গেরবাড়ী হতে নতুনহাট এলাকায় সাকোয়া নদীর উপর নির্মিত সেতু ভেঙে গেছে। সড়ক ও সেতু ভেঙে যাওয়ায় এসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার সাধারণ মানুষদের চলাফেরায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দহগ্রাম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কলোনিপাড়া এলাকার আমিনুল ইসলাম (৫৫) বলেন, প্রতিবছর ভারত পানি ছেড়ে দেয়, এতে আমাদের এই রাস্তা ভেঙে যায়। জমি-জায়গা, রাস্তা-ঘাট নষ্ট হয়। তিস্তা মহাপরিকল্পনা চালু করলে আমাদের উপকার হবে, না হলে আমাদের ক্ষতি হতেই থাকবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার জানান, বন্যার্তদের সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র। তালিকা করে সরকারি সহায়তা প্রদান শুরু হয়েছে।
