ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন

সুষ্ঠু ভোট চান এম কে রহমান ও নাহিদ সুলতানা যূথি

আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৫ পিএম

আইনজীবীদের শীর্ষ সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আগামী ৬ ও ৭ মার্চ। সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এ নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রচার প্রচারণায় মেতে উঠেছেন আইনজীবীরা। এবারের নির্বাচনে সরকারপন্থী সাদা ও বিএনপিপন্থী নীল প্যানেলের বাইরেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রর্থী হয়ে প্রচারণায় নেমেছেন আরো বেশ কয়েকজন।

জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ সেশনে বার নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেল) সবার প্রার্থিতা বৈধ হয়েছে। একইভাবে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) থেকেও সবার প্রার্থিতা বৈধ হয়েছে। এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং এম কে রহমানের প্রার্থিতা বৈধ হয়েছে। সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়ার প্রার্থিতা বৈধ হয়েছে। কোষাধ্যক্ষ পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে সাইফুল ইসলামের প্রার্থিতা বৈধ হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে এম কে রহমান প্রার্থী হয়েছেন। তিনি আওয়ামী পন্থি আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সালের মার্চে সরকার তাকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেয়। এরপর ২০১৪ সালের মে মাসে সরকার আবার তাকে অব্যাহতি দেয়। সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে এম কে রহমানের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এ কারণে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সাদা প্যানেলের ভোট ভাগাভাগি হতে পারে।

অন্যদিকে সাদা প্যানেলের বিপরীতে নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচন করছেন। তিনি এর আগে সাত বার সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে এম কে রহমান বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছি। আশা করছি প্রার্থিতা বৈধ ঘোষিত হবে। আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করব না। বারটাকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। আমরা আসা করি নির্বাচনের যে সাব কমিটি হয়েছে তারা একটি ভালো ও সুন্দর নির্বাচন করবে। আমরা শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ বার চাই।’

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন, বারের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা যুথি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুলা) প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উত্তরবঙ্গ আইনজীবী সমিতির সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এছাড়াও আওয়ামী লীগ প্যানেল থেকে নির্বাচন করে সুপ্রিম কোর্ট বারে কোষাধ্যক্ষ পদেও নির্বাচিত হয়েছেন।

নাহিদ সুলতানা যুথি বিজয়ী হতে না পারলেও দুজন একই ঘরানার হওয়ার কারণে সাদা প্যানেলের ভোট ভাগাভাগি হবে। এতে নীল প্যানেলের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এ বিষয়ে নাহিদ সুলতানা যূথি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখতে চাই। যে নির্বাচনে বারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। এই নির্বাচন কমিশন সুন্দর একটা নির্বাচন উপহার দেবে এমনটাই আমরা চাই।

নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের কাজ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এই মুহূর্তে বলতে পারছি না তারা নির্বাচনটা স্বচ্ছ করবেন কি না। আমরা বিজ্ঞ আইনজীবীদের আহ্বান জানাই, আপনারা ভোট দিন, আপনারা নেতা নির্বাচিত করুন। সুপ্রিম কোর্ট বারে দীর্ঘদিনের অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে গণতন্ত্রের চর্চা আছে সেটি যেন অব্যাহত থাকে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান বুলু বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে প্যানেলের কোনো কথা নেই। প্যানেল হলে সেটাই অপরাধ। আমরা বারের গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা চাই সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করবে।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনা সাব কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারার মো. কামাল হোসেন বলেন, বার নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের জন্য এবার আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। সবাইকে নিয়ে আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। গত দুটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়নি। তবে আশা করছি এবার একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারব।

২০২৪-২৫ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) নির্বাচনের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করেন সমিতির সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল। তফসিলে আগামী ৬ ও ৭ মার্চ ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

নির্বাচনে সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন, সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দুজন সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব। সাতটি সদস্য পদে সৌমিত্র সরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, রায়হান রনি।

আর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল থেকে মনোনীত বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), দুজন সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম। সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সভাপতি, সম্পাদকসহ মোট ১৪টি পদ রয়েছে। ২০২৪-২০২৫ সেশনের নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থী পরিচিতি ৪ মার্চ। আর ৬ ও ৭ মার্চ ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

SN/SA
আরও পড়ুন