ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বেনজীরের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৪, ১০:১৬ পিএম

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিষয়ে দুদককে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন হাইকোর্ট। সোমবার (২৯ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে আদালতে দুদকের প্রতিবেদন তুলে ধরে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। বেনজীর আহমেদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

এ বিষয়ে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের অনুসন্ধান নিয়ে দুদককে অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়েছে। আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে দুদককে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে বলেছেন। আগামী ৫ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ফের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। আর অভিযোগের প্রমাণ মিললে দুদককে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। রিটকারী ও রাষ্ট্রপক্ষও উচ্চ আদালতের এই আদেশ নিশ্চিত করেন।

এর আগে রোববার হাইকোর্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদের নামে মোট ৯ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৫ টাকা মূল্যের (২) তাঁর স্ত্রী জিশান মীর্জার নামে মোট ২১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৩ টাকা মূল্যের (৩) জ্যেষ্ঠ কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে মোট ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৬ টাকা মূল্যের এবং (৪) মেঝো কন্যা তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর এর নামে মোট ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।

রোববার দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান জানান, আজ দুদকের এ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আগামীকাল  এ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন সূত্র হতে এ যাবৎ প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র/তথ্যাদির পর্যালোচনা করা হয় উক্ত পর্যালোচনায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট (১) বেনজীর আহমেদের নামে মোট ৯ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৫ টাকা মূল্যের (২) তার স্ত্রী জিশান মীর্জার নামে মোট ২১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৩ টাকা মূলোর (৩) জ্যেষ্ঠ কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে মোট ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৬ টাকা মূল্যের এবং (৪) মেঝো কন্যা তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর এর নামে মোট ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, স্থাবর সম্পদের দলিলে প্রদর্শিত মূল্য এখানে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

এছাড়াও অনুসন্ধানকালে দেখা যায় যে, (১) বেনজীর আহমেদ এর নামে বান্দব্ববান পার্বত্য সদর উপজেলাস্থ ৩৯৪ নং সুয়ালক মৌজার দাগ নং- ৬১৪. হোল্ডিং নং- ৭২০, এর অন্দর ২৫ (পঁচিশ) একর জমি লিজ গ্রহণ করেন (২) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী মিসেস জীশান মির্জার নামে মুন্সিগঞ্জ জেলার। সিরাজদিখান উপজেলার দোশরপাড়া ও বালুচর মৌজার ধলেশ্বরী সমবায় সমিতি লি: এ একটি করে মোট ২টি প্লট (জমির পরিমাণ ১৪ কাঠা) রয়েছে (৩) জিশান মীর্জার মালিকানাধীন প্লট নং ১/এ, রোড নং ১০/এ, সেক্টর ১১, উত্তরা, ঢাকা মৌজা: বাইলজুরী, থানা: উত্তরা, উত্তরা আবাসিক এলাকার ৩ কাঠা জমি ও এর উপরিস্থিত ৭ (সাত) তলা বাড়ি রয়েছে এবং (৪) মিসেস জীশান মির্জার মালিকানাধীন হোল্ডিং নং-৫৩, রোড নং- ৯. ব্লক-খ, পিসি কালসার হাউজিং, আদাবর, ঢাকার ফ্ল্যাট নং- এ/১. বি/১. এ/৩, বি/৩. এ/৫. বি/৫ সমূহ রয়েছে, কিন্তু এসব সম্পদের মূল্য কোথাও উল্লেখ নেই এবং প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। তবে, যাচাই অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ প্রকৌশলী/বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিমাপ গ্রহণপূর্বক মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে উল্লিখিত সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মূল্য আরো বেশী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত সম্পদের তথ্য ছাড়াও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের নামে-বেনামে, দেশে-বিদেশে আরও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায়, তাদের বরাবরে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির সুপারিশসহ গত ৩ জুন তারিখে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

এর আগে, ২৩ এপ্রিল সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধনে দুদক যে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে, সেই কমিটির কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। দুই মাসের মাসের মধ্যে কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

গত ৩০ জুলাই বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানির পর এ আদেশ দেন।

AS
আরও পড়ুন