ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

পঞ্চদশ সংশোধনী

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম

বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করা হয়, যেখানে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা বাতিলের আবেদন জানানো হয়। রিটটি দায়ের করেন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করে এবং গণভোটের বিধান পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ হয়ে গেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি, ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আস্থা সংকট তৈরি হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।

হাইকোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তি সংক্রান্ত ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদ, এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজিত ৭(ক), ৭(খ) ও ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে বাতিল করা হয়।

এছাড়া গণভোটের বিধান বিলুপ্তি সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনীর ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী ঘোষণা করে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়।

রায়ে আদালত বলেন, ‘গণতন্ত্র সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্যতম ভিত্তি। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার বিকল্প নেই।’

তবে আদালত পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা বাতিল করেনি। জাতির পিতার স্বীকৃতি ও ২৬ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের বিষয়সহ কিছু ধারা বহাল রাখা হয়, এবং এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে সংসদ জনমতের ভিত্তিতে পরিমার্জন করতে পারবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে সংসদে নারীদের সংরক্ষিত আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়।

হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের পক্ষে ছিলেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবং ইনসানিয়াত বিপ্লব, গণফোরামসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।

দীর্ঘ ২৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন এবং পরে এ ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করা হয়। এখন আপিল বিভাগের অনুমতি পাওয়ায় বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে পূর্ণাঙ্গ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

DR/AHA
আরও পড়ুন