বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে ডিবির হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য। এছাড়া তিনি জননিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার অপচেষ্টায়ও লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে ডিবির তদন্ত টিম। তার কাছে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলা নিয়ে ডিবিতে যাচাই-বাছাই চলছে।
ডিবি জানায়, প্রাথমিকভাবে তার ফোন বিশ্লেষণ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার পর তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তার রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে অধিকতর পর্যালোচনা করার জন্য ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জায়গায় নতুন একটি জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের লক্ষ্যে কাজ করতে বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট হয়ে তিনি ঢাকায় আসেন।
এর আগে গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়ায় গাড়িতে করে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে তাকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. আজিজুল হাকিম। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি সেদিন অভিযুক্তকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন এবং রিমান্ড শুনানির জন্য গত সোমবার দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে ডিবি পুলিশের হেফাজতে এনায়েত করিম চৌধুরীর দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন আসামিকে আদালতে উপস্থিত করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামির আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
আসামি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় হওয়া সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়া এলাকায় প্রাডো গাড়িতে আরোহণ করে সন্দেহজনক চলাচল করতে দেখা যায় আসামি এনায়েত করিম চৌধুরীকে। এ সময় তার গাড়ি থামানো হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তার কাছ থেকে পাওয়া দুটি আইফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ফোন বিশ্লেষণ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান যে, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তিনি গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট যোগে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামি এনায়েত করিম চৌধুরীর আরও জানান, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নিমিত্তে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান।
তিনি গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন। পরে গুলশানের বর্তমান ঠিকানায় অবস্থান করতে থাকেন। এরই মধ্যে তিনি সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমেরিকান সরকার হতাশ।
আগামী ২১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় রহিত করবেন বলে জানান আসামি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে সেনাবাহিনী সমর্থিত নতুন জাতীয় সরকার অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। নতুন এই সরকারে কারা অংশ নেবেন এবং সরকারপ্রধান কে হবেন তা আমেরিকা নির্ধারণ করে দেবে বলে জানান। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বর্তমান অবস্থান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে তাকে নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার নিকট হস্তান্তর করতেন বলে জানান।
মামলায় বলা হয়, আসামি এনায়েত করিম চৌধুরি বর্তমানে বাংলাদেশের বৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার জন্য অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে এসে জননিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছেন, যা ধর্তব্য অপরাধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি'র পরিদর্শন আকতার মোর্শেদ খবর সংযোগকে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে। আমরা তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করছি। তার কাজ থেকে পাওয়া আইফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আবেদন করা হয়েছে, কোর্ট থেকে আদেশ পাওয়ার পরে এরপরই সিআইডি তে পাঠাবো। যদিও রেজাল্ট পেতে দেরি হবে। তবে তার কাছে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেগুলা যাচাই বাছাই চলছে।
