বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ শতাধিক খামারি কৃষককে গবাদিপশুর চিকিৎসাসেবা, প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ, লাম্পি স্কিন রোগের টিকাদান, উন্নতজাতের ঘাসের বীজ-ছাগল বিতরণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পিএইচডি শিক্ষার্থীরা।
বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল গ্রামে বন্যা-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে ‘সমন্বিত পশুচিকিৎসা সহায়তা ও টেকসই খাদ্য কর্মসূচি’ অনুষ্ঠিত হয়।
দিনব্যাপী এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাকশীমূল গ্রামের প্রায় ২০০ খামারিকে উন্নত জাতের অস্ট্রেলিয়ান সুইট জাম্বু হাইব্রিড ঘাসের বীজ ও পাকচুং ঘাসের কাটিং সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া ২০০ গরুকে লাম্পি স্কিন রোগের টিকা দেওয়াসহ অভিজ্ঞ প্রাণী চিকিৎসকরা গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ওষুধও সরবরাহ করা হয়েছে।
ক্যাম্পেইনের বিশেষজ্ঞগণ কৃষকদের মাছ চাষ,পশুপালন ও ঘাস চাষ নিয়ে আলোচনা করেন এবং প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। বাকৃবির পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ১১ সদস্যের টিমের পরিচালনায় এই ক্যাম্পেইনটি সম্পন্ন হয়।
এ ছাড়া ১১ দরিদ্র পরিবারের মাঝে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বিতরণ করে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হয়।
ক্যাম্পেইনে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বিকন বাংলাদেশ, আজিমুর রোকিয়া রহমান ট্রাস্ট, ব্রাদারস অব ল্যাব '৯৫, এগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বিডি এবং বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
ক্যাম্পেইনে বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক-১ কৃষিবিদ মো.মাহমুদুন্নবী মিঠু বলেন, উপজেলায় যে বন্যাটি হয় সেটি ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানির ঢলের কারণে। এই পানিতে মাছের ছত্রাকজনিত জীবাণু থাকতে পারে। শীতকালে যখন তাপমাত্রা কমে যাবে তখন পুকুরে মাছের ক্ষতরোগের প্রাদুর্ভাব বাড়বে। এই রোগের প্রতিরোধের জন্য শীত আসার আগেই পুকুরে শতক প্রতি ৩'শ গ্রাম লবণ ও ২৫০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষি অর্থনীতিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি থেকে ঘুরে দাঁড়াবার লক্ষ্যে গবাদিপশু, মৎস্য খামার, ফসলসহ লাভজনক উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশসম্মত জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে হবে।
ক্যাম্পেইনে বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ অমিত কুমার বসুনিয়া বলেন, ক্যাম্পেইনে আমরা গবাদিপশুর খাদ্য উৎপাদনের জন্য যে উন্নতজাতের হাইব্রিড ঘাসটি খামারি কৃষকদের মাঝে সরবারাহ করছি এই ঘাসটির বৈশিষ্ট্য হলো এটি একবার রোপন করলে পাঁচ বছর পর্যন্ত উৎপাদন সম্ভব। প্রতি প্যাকেটে এক কেজি করে ঘাসের বীজ রয়েছে যা দিয়ে তিন বিঘা পতিত জমিতে চারা উৎপাদন করা যাবে।
বাকৃবি পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোর্শেদ হাসান মোস্তফার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক মো. মাহমুদুন্নবী মিঠুর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ, কুমিল্লা জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার, বুড়িচং উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতিকুর রহমান ও বাকশীমূল আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মফিদুল ইসলাম।
এ ছাড়াও এতে অংশ নেন বাকৃবির পিএইচডি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক-২ ডা. শংকর বিশ্বাস, সদস্য ডা. শাহিদা আখতার, সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম ও কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লাহ।
