ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

কুয়েটে আবারও অস্থিরতা: তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) আবারও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত চালু, নিরপেক্ষ নতুন তদন্ত কমিটি গঠন এবং পূর্বঘোষিত পাঁচ দফা দাবির বাস্তবায়নে স্পষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেছে শিক্ষার্থীরা।

দুপুর সাড়ে ১২টায় স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে জমায়েত হন। সেখানেই তাঁরা তিন দফা দাবি তুলে ধরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

তিন দফা প্রধান দাবি:

  • নতুন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে পূর্বের শোকজ তালিকা বাতিল।
  • ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলা এবং শিক্ষকদের ওপর নিগ্রহের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত।
  • নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশে দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম শুরু।

অবস্থান চলাকালে উপাচার্য অধ্যাপক হজরত আলী, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। উপাচার্য দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শোনেন এবং সমস্যা সমাধানে সময় চান।

তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি।

অন্যদিকে শিক্ষকদের কর্মবিরতির আজ অষ্টম দিন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক সমিতি ৫ মে এক সাধারণ সভায় সাত কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষকদের লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি করে। সেই সময়সীমা আজ শেষ হচ্ছে।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সময়সীমা আজ শেষ হচ্ছে। শুক্রবার ও শনিবার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রোববার শিক্ষক সমিতির সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সাবেক উপাচার্যের বিদায়ের পরও পুরোনো ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ তদন্ত প্রতিবেদন অনুসরণ করে তাদের শোকজ করা হয়েছে। তারা দাবি করেন, তদন্ত কমিটি ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার জন্য গঠিত হলেও ১৯-২২ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের ওপর শাস্তি আরোপ করে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন এবং একই ব্যক্তিকে তদন্ত ও শৃঙ্খলা কমিটিতে রাখা হয়েছে, যা স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সিসিটিভি ফুটেজ বহিরাগতদের কাছে দেওয়া, শিক্ষকদের কাছে অভিযুক্ত তালিকা না পৌঁছানো এবং ছাত্রদল নেতার কাছে পৌঁছানো- এসব তথ্যও কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক হজরত আলী।

শিক্ষার্থীরা আগামী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের মধ্যে ক্লাসে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন, তবে তার আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষতা, নিরাপত্তা ও সুবিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক হজরত আলী বলেন, একাডেমিক কার্যক্রম যত দ্রুত সম্ভব শুরু করতে চাই। সবাই সহযোগিতা করছেন, তবে এখনো ক্লাস খোলার বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন পক্ষের চাপ আছে, জটিলতা আছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-সবাইকে নিয়ে আলোচনা করছি। সবাই তাদের দাবিতে অনড়, তাই সময় একটু বেশি লাগছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা হয়, যাতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে সরিয়ে দেয় সরকার। পরে ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

Raj/FJ
আরও পড়ুন