ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী কলেজ শিক্ষকদের মানববন্ধন

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম

রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত সরকারি কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ স্থাপন করা যাবে না বলে এর বিরুদ্ধে  মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষকরা। এসময় তারা ১১ দফা দাবি  জানান। 

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে রাজধানী পুরান ঢাকার  সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে  মানববন্ধন করে এ দাবিগুলো দেন তারা।

তারা বলেন, ‘ঢাকার সাত কলেজকে কেন্দ্র করে প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে আমরা সাত কলেজে কর্মরত শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করে আসছি। এ বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি প্রদান করেছি এবং আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে জানিয়েছি। অথচ দুঃখজনকভাবে দেখা গেল যে আমাদের উদ্বেগ ও প্রস্তাবকে কোনো গুরুত্ব না দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত খসড়ায় সাত কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, কলেজে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’

এদিকে, শিক্ষকদের মানববন্ধনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লিখেছেন, বিগত ৯ বছর একদিন শিক্ষার্থীদের জন্য কবে রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন বলতে পারবেন? সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা যে পরিমান অবহেলার স্বাকীর তার বিন্দুমাত্র সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন, কলেজের কাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে একদিন ব্যানার ধরে দাঁড়িয়েছেন? সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা এত অবহেলিত যে তাদের একটা আবাসন নেই, সেটা নিয়ে কথা বলেছেন,কলেজের বাস,ক্যান্টিন বিশুদ্ধ পানি যেকোন কিছুর জন্য উদ্দ্যেগ নিয়েছিলেন?  হ্যাঁ যতটুকু হয়েছে সেটা শিক্ষার্থীরা  আদায় করে নিয়েছে।  সুতরাং বিগত বছরে একটা আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের জন্য করেন নাই?  এখন আন্দোলন করা হাস্যকর। আপনারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের দিকে তাকাবেন তাদের শিক্ষার্থীদের  আন্দোলনে শিক্ষকরা কী অগ্রণী ভূমিকা রাখে।

আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, পোষ্যকোটার মত করে সাত কলেজের কিছু শিক্ষকদের 'সাত কলেজে শিক্ষক কোটা' বরাদ্দ করলে কেমন হয়? শুধুমাত্র তাদের ছেলে মেয়ে এখানে জব করতে পারবে অন্য কেউ আসতে পারবে না। একই সাথে তাদের ছেলে মেয়েদের স্বামী এবং স্ত্রী'কে ঢাকাতেই জব দিতে হবে সরকারের বাধ্যতামূলক। ভুলে গেলে হবে ঢাকাতেই তো সব নামি-দামি স্কুল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের লাইফ নিশ্চিত করতে হবে তো নাকি। তোরা কৃষকের ছেলে সরকারি কলেজে পড়ে একটা পিয়নের চাকরি করলেই হল। এটা কি আমাদের জন্য কম!

শিক্ষার্থীরা আরও লিখেছেন, বিগত ৯ বছর একদিন শিক্ষার্থীদের জন্য কবে রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন বলতে পারবেন? এখন কি শিক্ষার্থীদের জন্য দাঁড়াচ্ছেন নাকি নিজেদের জন্য!

শিক্ষকদের  ১১ দফা দাবি হলো-  

১। সাত কলেজের নাম বা কাঠামো পরিবর্তন করে কোনো অনুষদে অথবা স্কুলে রূপান্তর করা যাবে না। অর্থাৎ কলেজ কাঠামোর মৌলিক রূপ ভেঙে অনুষদভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা যাবে না।

২। কলেজের লোগোসহ স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি স্ব-স্ব কলেজের নামে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। কোনোভাবেই জোরপূর্বক এসব সম্পদের মালিকানা প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর গ্রহণযোগ্য নয়।

৩। বর্তমানে পাঠদান করা হয় না-এমন কোনো নতুন বিষয় সংযোজন করে শিক্ষার্থীদের অযথা ভোগান্তিতে ফেলা যাবে না।

৪। বিদ্যমান কোনো বিষয় বিয়োজন করা যাবে না। বিশেষত আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বাদ দেওয়ার চেষ্টা ইসলামবিদ্বেষের সামিল এবং তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

৫। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৬। সাত কলেজকে পরীক্ষাগার বা গিনিপিগ বানিয়ে কোনো পরীক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয় মডেল চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সাতটি সরকারি কলেজকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাখা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে এবং সকল পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

৭। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে সকল প্রশাসনিক পদ ও শিক্ষক হিসেবে শুধুমাত্র বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের নাম স্পষ্ট ও এককভাবে উল্লেখ করতে হবে।

৮। সাত কলেজ সরকারের বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত গ্রহণ ও যৌক্তিকতা যাচাই করা আবশ্যক। এজন্য প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইন পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রিভিউ কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করতে হবে।

৯। ঢাকা কলেজসহ পাঁচটি কলেজ দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে আসছে। তাই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম স্বার্থবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হবে না।

১০। সাত কলেজে ইতোমধ্যেই উচ্চশিক্ষার ব্যাপক সংকোচন করা হয়েছে। বিশেষত ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজ বহু বছর ধরে নারীদের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান করে আসছে। প্রস্তাবিত কাঠামোয় নারী শিক্ষার ব্যাপক সংকোচনের পরিকল্পনা স্পষ্ট, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

১১। সাত কলেজে কর্মরত কোন কর্মচারীর চাকরি বা অন্য কোন স্বার্থ ক্ষুন্ন করা যাবে না।

এদিকে সাত কলেজের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, যেহেতু প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যগণ ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত নন, সেহেতু যেসব শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাদের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করার আইনি ভিত্তি আমাদের নেই।

এ সময় খসড়া অধ্যাদেশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের অবস্থান নিশ্চিত না করলে তারা ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করবেন না বলে হুঁশিয়ারি প্রদান করেন।

LH/FJ
আরও পড়ুন