ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ইউজিসির আপত্তির মধ্যেই ববিতে ‘অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি বোর্ড অব্যাহত

আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৪ এএম

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ২৪টি ‘অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর আপত্তি তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি ইউজিসির একটি বাজেট টিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি বিষয়ে অডিট আপত্তি দিয়েছে, যার মধ্যে ৬টি আপত্তি পদোন্নতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত এবং ৪টি রেজিস্ট্রার-সংক্রান্ত। এসব আপত্তির তোয়াক্কা না করে ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমের নির্দেশে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বোর্ড চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

ইউজিসির অডিট আপত্তির কারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মোট বাজেট বরাদ্দ (৬৪ কোটি টাকা) থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা আটকে দেয়া হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে মোট বরাদ্দ এখন প্রায় ৫৪ কোটি টাকা। গত ২২ অক্টোবর ইউজিসির তিন সদস্যের বাজেট অডিট টিম হঠাৎ পরিদর্শনে আসে এবং এই আপত্তি জানায়।

 

যেসব খাতে বরাদ্দ আটকে দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: অনুমতিহীন দৈনিক মজুরি কর্মচারীদের জন্য ৮৪ লাখ টাকা বিআরটিসি বাস ভাড়া বাবদ: ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। পরিবহন ব্যয়: ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আনসার নিয়োগ ৯০ লাখ টাকা। আবাসিক ভবন ভাড়া বাবদ ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আউটসোর্সিং ও শ্রমিক মজুরি প্রায় ১৮ লাখ টাকা। যৌন হয়রানি প্রতিরোধসহ বিভিন্ন কমিটির কার্যক্রম বাবদ: ২১ লাখ টাকা।

 

ইউজিসির অডিট আপত্তিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন নিয়ে। ইউজিসি স্পষ্ট জানিয়েছে: ২৪টি অধ্যাপক পদের বিপরীতে মাত্র ২টি শূন্যপদ ছাড়া ইউজিসির কোনো অনুমোদিত পদ নেই। ৯টি অনুমোদিত অধ্যাপক পদের মধ্যে ৭টি পদ ব্লক করে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই সেখানে প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা নিয়মসিদ্ধ নয়। ব্লক করে রাখা ৭টি অধ্যাপক পদের বিপরীতে পুনরায় আপগ্রেডেশন প্রদান নিয়মসিদ্ধ হবে না। অবশিষ্ট ২টি শূন্যপদেও উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার কথা, আপগ্রেডেশন নয়।

 

এছাড়াও, চলতি বছরের ৭ জুলাই প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১০ জন প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬টি পদে ইউজিসির আর্থিক ও প্রশাসনিক অনুমোদন ছিল না। বাকি ৪টি পদেও সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে নিয়োগ সম্পন্ন না করায় নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ অক্টোবর থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বোর্ড শুরু হয়েছে এবং ইতোমধ্যে অধিকাংশ বিভাগের বোর্ড সম্পন্ন হয়েছে। আজ ১ নভেম্বর (শনিবার) উদ্ভিদবিজ্ঞান ও ইতিহাস বিভাগের পদোন্নতি বোর্ড বসার মাধ্যমে এই কার্যক্রম শেষ হবে। এর আগে, ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ হিসেবে পরিচিত শিক্ষকদের পদোন্নতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ইউজিসির দৃষ্টি আকর্ষণ হয় এবং তারা ২২ অক্টোবর বাজেট টিম পাঠায়।

 

পদোন্নতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য আপত্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে, অনুমোদন ছাড়াই অনিয়মিত প্রভাষক নিয়োগ। দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ।কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি নীতিমালায় অসংগতি।অনিয়মিত পর্যায়োন্নয়ন।

 

রেজিস্ট্রার সংক্রান্ত আপত্তি

 

রেজিস্ট্রার অধ্যাপক হয়েও কেন সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কমিটির সদস্য? আবাসিক কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কেন ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকেন না? রেজিস্ট্রার কেন গাড়ি ব্যবহার করেন?

 

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য 

 

ববির অর্থ দফতরের উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আতিকুর রহমান ইউজিসির অডিট রিপোর্ট পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে জানান, এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম জানান, ইউজিসি যা বলবে সেটা তারা মানতে বাধ্য। তবে তিনি লিখিতভাবে কোনো অডিট আপত্তি পাননি। লিখিত আপত্তি পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এবং ইউজিসির সাথে মিটিং করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

HN
আরও পড়ুন