ছুটির দিনের সকালে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। আতঙ্কে ঘর ছেড়ে রাস্তায় ছুটে আসেন বহু মানুষ। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে শুরু হওয়া কম্পনে বিভিন্ন স্থানে দেয়াল ধস, ফাটল ও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই জানতে চাইছেন ভূমিকম্প কতটা বিধ্বংসী হতে পারে? বাস্তব পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত বেশ কিছু চলচ্চিত্র রয়েছে, যেগুলোতে দুর্যোগের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে অবিশ্বাস্য বাস্তবতায়। দেখে নেওয়া যাক তেমনই পাঁচটি সিনেমার গল্প-

স্যান অ্যানড্রেস (২০১৫)
ডোয়াইন জনসন অভিনীত এই ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার কুখ্যাত ‘স্যান অ্যানড্রেস ফল্ট’কে কেন্দ্র করে। গল্পে দেখানো হয় ৯ মাত্রার এক ভূমিকম্প ক্যালিফোর্নিয়াকে মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে। ধসে পড়া ভবন, সুনামি এবং শহরজুড়ে বিপর্যয়ের দৃশ্যগুলো অত্যন্ত বাস্তবভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এক রেসকিউ পাইলট তার স্ত্রীকে নিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করতে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে সান ফ্রান্সিসকোতে দুঃসাহসিক যাত্রা করেন।

দি ইম্পসিবল (২০১২)
২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও তৎপরবর্তী সুনামির সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হৃদয়বিদারক এই চলচ্চিত্রে থাইল্যান্ডে ছুটিতে যাওয়া এক স্প্যানিশ পরিবারের ওপর নেমে আসা বিভীষিকাময় ঘটনার কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। বিশাল জলোচ্ছ্বাসে পরিবারটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম এবং প্রিয়জনকে খুঁজে পাওয়ার লড়াইই ছবিটির প্রধান গল্প। নাওমি ওয়াটস ও ইউয়ান ম্যাকগ্রেগর অভিনীত এই ছবি দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে।

আফটারশক (২০১২)
চিলিতে আঘাত হানা ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের পটভূমিতে নির্মিত এই দুর্যোগধর্মী চলচ্চিত্রে দেখানো হয় একটি নাইটক্লাব ধসে পড়ার পর কয়েকজন পর্যটক কীভাবে জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করে। ভূমিকম্পের পর বেরিয়ে আসার পরও শুরু হয় নতুন দুঃস্বপ্ন; চারদিকে বিশৃঙ্খলা, লুটপাট ও বাঁচার লড়াই।

দ্য কোয়াক (২০১৮)
নরওয়েজিয়ান এই সিনেমা ‘দ্য ওয়েভ’-এর সিক্যুয়েল। একজন ভূতাত্ত্বিক ক্রিশ্চিয়ান আইকজর্ড অনুসন্ধান করতে গিয়ে বুঝতে পারেন অসলোতে যেকোনো মুহূর্তে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। কর্তৃপক্ষ সতর্কবার্তা উপেক্ষা করলেও দুর্যোগ এসে হাজির হয়, আর তখন পরিবারকে বাঁচাতে তার শুরু হয় জীবন-মরণ সংগ্রাম। টানটান উত্তেজনা ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের জন্য চলচ্চিত্রটি বিশেষভাবে প্রশংসিত।

আর্থকোয়েক (১৯৭৪)
লস অ্যাঞ্জেলেসে ৯.৯ মাত্রার কাল্পনিক ভূমিকম্পের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই ক্লাসিক দুর্যোগ চলচ্চিত্রে। বিভিন্ন চরিত্রের জীবনের সংকট ও ভূমিকম্পের মুহূর্তে তাদের সংগ্রাম গল্পে তুলে ধরা হয়েছে। সে যুগের প্রযুক্তি সত্ত্বেও বিশেষ ইফেক্ট ও অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে এবং এখনও এটি দুর্যোগভিত্তিক চলচ্চিত্রের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত।
ভূমিকম্পে বাস্তব ক্ষয়ক্ষতির খবরের সঙ্গে এই চলচ্চিত্রগুলোর দৃশ্য মিলিয়ে আজ বহু মানুষ নিজের ভয়ের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন। দুর্যোগপ্রবণ দেশে সচেতনতা বাড়াতে বাস্তব ঘটনার ওপর নির্মিত এসব চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
