দুর্গাপূজার বড় অনুসঙ্গ গান। গান ছাড়া পূজা জমেই না। বাংলা গানের একসময় রমরমা বাজার অফলাইনে যেমন ছিল, অনলাইনেও তা তেমন কমেনি বলা যায়।
এবারের দুর্গাপূজায় বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী উত্তমের ৪টি গান রিলিজ হচ্ছে। গানগুলো তার ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাবে। এর মধ্যে একটি মৌলিক গান। শিরোনাম ‘তুমি আমার নিশানা’। এটি শিল্পীর নিজের লেখা, সুর ও গাওয়া।
গানটির সঙ্গীতায়োজন করেছেন খ্যাতিমান মিউজিসিয়ান মুশফিক লিটু। কক্সবাজারে গানটির চিত্রায়ন করা হয়েছে। শিল্পীর নিজের স্টুডিও উত্তম মিউজিক স্টেশনে বানানো অন্য আরো ৩টি গান মহান সঙ্গীতজ্ঞ কাজী নজরুলের। শুদ্ধ বাণী ও সুরে গাওয়া গান ৩টি হলো- জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী, এবার নবীন মন্ত্রে হবে জননী তোর উদ্বোধন এবং জগতের নাথ করো পার হে। গিটার বাজিয়েছেন নিজেই।
আধুনিক যন্ত্রানুসঙ্গের মিশেলে গানগুলোর মিক্স-মাস্টার করেছেন মুশফিক লিটু। এই গানগুলো শিল্পীর ক্যারিয়ারে আলাদা মাত্রা আনবে বলে জানান লিটু। নজরুলের গানে বুঁদ থাকা শ্রোতার অভাব নেই বাংলাদেশে। তাই গানগুলোর যথেষ্ট প্রচার প্রত্যাশা করেন তিনি।

উত্তমের গেীরবময় মিউজিক সফর অনেক দিনের। ছেলেবেলা থেকেই উত্তমের গান গাওয়ার শুরু। গানের তালিম, গানে গানে বেড়ে ওঠা স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। সবখানেই সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জুটেছে সম্মান আর পুরস্কার। উত্তমের পড়াশোনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় সমাজবিজ্ঞান। নজরুল ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমায় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত ও সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির নজরুলের প্রশিক্ষক হিসেবে সার্টিফিকেটধারী।
এছাড়া রবীন্দ্রভারতী থেকে বিমিউজ সম্পন্ন করেছেন। তালিম নিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতিমান সব সঙ্গীতজ্ঞের কাছে। এখন নিজেও গান শেখান। উত্তম একটি বেসরকারি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবেও কাজ করছেন দীর্ঘদিন।
উত্তম বিটিভিসহ প্রায় সবগুলো বেসরকারি টিভি চ্যানলে লাইভ ও রেকর্ডেড নানা ধারার গানের অনুষ্ঠান করে নাম কুড়িয়েছেন। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে মূলত নজরুলসঙ্গীত ও আধুনিক গান করেন উত্তম। তিনি বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালকও। মিউজিক কম্পােজার্স সোসাইটি বাংলাদেশ এমসিএসবির সদস্য। নিজের লেখা ও সুর করা অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান রয়েছে তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে। গভীর আবেগী গায়নভঙ্গীর অনন্যতার জন্য এরই মধ্যে উত্তম সঙ্গীতজনদের দৃষ্টি কেড়েছেন। সমানতালে স্টেজ শো-ও করেন নিয়মিত। সব ধরনের সঙ্গীতেই উত্তমের আগ্রহ। শুনেনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য রক-ফিউশন নির্বিচারে। গানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকারও করেছেন তিনি। আর গান গাওয়ার কোনো বিকল্পই খুঁজে পান না।
উত্তমের জন্ম বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়ে। বাবা প্রয়াত মনীন্দ্র রায়। মা প্রয়াত চিনুবালা রায়। তার অন্যতম জনপ্রিয় গানগুলাের মধ্যে ভালবাসার ময়না, আমার চোখের জলে বহে নদী, পরাণ বন্ধু অন্যতম। অর্ন্তজাল তথা ফেসবুকে কিশোরকুমার, মান্না দেসহ স্বর্ণযুগের শিল্পীদের অমর সৃষ্ট সব গান নিয়িমিত গেয়ে ভার্চুয়ালি বেশ জনিপ্রয়তা ও দর্শক-ভালোবাসা পেয়েছেন এই শিল্পী।

২০০৪ সালে উত্তমের ডেব্যু অ্যালবাম ‘হাওয়া’ ছিল আধুনিক গানের। পরের উল্লেখযোগ্য অ্যালবাম কাজী নজরুলের বাছাই করা অবিস্মরণীয় কীর্তন, ভজন, বাউল, শ্যামা বিষয়ক ৮টি ভক্তিগীতি নিয়ে ‘এলোরে শ্রী দুর্গা’। এছাড়া উত্তমের আধুনিক ও নজরুলের গানের বেশকিছু মিক্সড অ্যালবাম বাজারে রয়েছে। নিজের ইউটিউবে আছে ৫০০’র কাছাকাছি গান। তিনি চান একজন কমপ্লিট মিউজিশিয়ান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের মিউজিক শোনা ও চর্চার অভ্যাস। তাই সব ধরনের গান গাইতে। গিটার ও কি-বোর্ড বাজিয়ে হিসেবে নজর কাড়লেও অন্য বেশ কয়েকটি ইনস্ট্রুমেন্টও বাজাতে পারেন উত্তম। স্টুডিওতেও এ কাজগুলো করতে বেশ আনন্দ পান তিনি। তিনি চান, প্রত্যেক স্কুল-কলেজে মিউজিক ক্লাস হোক। ছেলে-মেয়েরা গুরুর কাছে গিয়ে গান শিখুক। বর্তমানে নজরুলসঙ্গীত শিল্পী পরিষদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। নজরুল ও তার সঙ্গীতের প্রতি রয়েছে উত্তমের বিশেষ ভালবাসা। তবে সব ধরনের সঙ্গীতেই উত্তমের আগ্রহ। শুনেনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য রক-ফিউশন নির্বিচারে। গানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকারও করেছেন তিনি।
ভালো লাগা, বিশ্বাস, জীবনবোধ তার সঙ্গীতকে ঘিরেই। উত্তম দীর্ঘদিন নজরুল চর্চা করেছেন সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশ ও সোহরাব হোসেনের কাছে। উত্তমের সঙ্গীতের প্রথম শিক্ষক স্থানীয় শিশু একাডেমির প্রয়াত দেলোয়ার হক। বিশুদ্ধ মার্গসঙ্গীত শিখেছেন উস্তাদ মিহির লালা, অনিলকুমার সাহা, গৌতম ভট্টাচার্য, উস্তাদ মাশকুর আলী খান, শুভ্রা গুহ, বিদুষী শান্তি শর্মা প্রমুখের কাছে। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে উচ্চতর তালিম নিয়েছেন পণ্ডিত তুষার দত্তের কাছে।
প্রিয় দর্শক-শ্রোতা, শুভাকাঙ্ক্ষী, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের দোয়া ও ভালবাসা চান উত্তম। চান আমৃত্যু গান গেয়ে যেতে।
