হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথমবারের মতো স্বর্ণ পরীক্ষার যন্ত্র (গোল্ড টেস্টিং মেশিন) বসিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। জার্মানি থেকে আনা এই যন্ত্র দিয়ে এরইমধ্যে স্বর্ণ পরীক্ষাও শুরু করেছেন কাস্টমসের কর্মকর্তারা। এই যন্ত্র বসানোকে ‘অনন্য উদ্যোগ’ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি কাস্টমসের কাজের গতি আরও বাড়াবে। আর যারা স্বর্ণের বার ভেঙে অলঙ্কার বানিয়ে শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করেন, তাদের সেই অপচেষ্টাও বন্ধ হবে।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার জাকির হোসেন এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা জার্মানি থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ‘গোল্ড টেস্টিং মেশিন’ এনেছি। এই মেশিনটি বিমানবন্দরের কাস্টমস হলে বসিয়ে ইতিমধ্যে আমরা কাজও শুরু করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মেশিনটি আনার ফলে দুই দিক দিয়ে সুবিধা হয়েছে। একদিকে অনেক যাত্রী বার ভেঙে শুল্ক ফাঁকির জন্য অলঙ্কার বানিয়ে নিয়ে আসেন। সেই অলঙ্কার আসলে ২৪ ক্যারেটের থাকে, অর্থাৎ সেগুলো বার। অনেক সময় তারা অলঙ্কার বলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের নানাভাবে বুঝিয়ে নিয়ে চলে যেতেন।’
‘আবার কাস্টমস কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে সেটি আটকে দিতেন। পরে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস) নিবন্ধিত দুটি জুয়েলারি সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে, তারা এসে এটি পরীক্ষা করতো। এতে করে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হতো। এমনও হয় যে, বিষয়টি সমাধান হতে ৬ মাস কিংবা একবছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতো’, বলেন এই কর্মকর্তা।
তার ভাষ্য, ‘বর্তমানে এই মেশিনটির ফলে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টির সমাধান হয়ে যাচ্ছে। যাত্রীর সামনেই পরীক্ষা হচ্ছে। যদি বার না হয়, সেটিও প্রমাণ হচ্ছে।’
এই মেশিনটি উন্নত প্রযুক্তির উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, ‘অলঙ্কার ২৪ ক্যারেটের না হলেও এতে আর কী কী ধাতু প্রয়োগ করা হয়েছে, তারও রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে।’
এদিকে বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা এটিকে কাস্টমসের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলছেন, কাস্টমস দিন দিন আরও আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে। বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি লাঘবে তারা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছেন।
বিমানবন্দর কাস্টমসের প্রিভেনটিভ টিমের উপ-কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রবাসীদের যাত্রীসেবায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু সেবা দেওয়া যায়, তার সবটুকুই প্রয়োগ করে যাচ্ছে। গোল্ড টেস্টিং মেশিন বসানোর ফলে যাত্রীদের যে হয়রানি হতো, সেটি আর থাকবে না। এটি কাস্টমসের অনন্য উদ্যোগ।
প্রসঙ্গত, বিমানবন্দরে এর আগে ‘ফার্স্ট ট্র্যাক সার্ভিস’ চালু করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর ফলে অনুমোদিত পরিমাণের অতিরিক্ত শুল্কারোপযোগ্য পণ্য তাৎক্ষণিক শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে খালাস করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে করে এখন থেকে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দরেই শুল্ক প্রদান করে পণ্য নিতে পারছেন। শুল্ক পরিশোধে সাময়িক অসুবিধা হলে যাত্রীরা ২১ দিনের মধ্যে শুল্ক প্রদান করে পণ্য ছাড়িয়েও নিতে পারেন। এর আগে এসব মালামাল আটক হলে কাস্টম হাউসে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা ছাড়ানোর ক্ষেত্রে ঝামেলায় পড়তে হতো।
এছাড়াও ব্যাগেজ রুলসে নিয়মও পরিবর্তন করা হচ্ছে। এই নিয়ম ব্যবহার করে একজন যাত্রী বছরে কতবার স্বর্ণ আনতে পারবেন, সেটি নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে করে অবাধে স্বর্ণ আনার প্রবণতাও কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিগগিরই নতুন এই নিয়ম চালু হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে।
