ঢাকা
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কানের মার্শে দ্যু ফিল্মে দেখানো হবে ‘বাঙালি বিলাস’

আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম

বাংলাদেশি সিনেমা ক্রমেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে। তারই আরেকটি প্রমাণ হতে যাচ্ছে এবাদুর রহমান পরিচালিত সিনেমা ‘বাঙালি বিলাস’, যা এবার স্থান করে নিয়েছে বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’র বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্ম- এ।

৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবটি চলবে ১৩ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত, যেখানে এবাদুর রহমান তার সিনেমা নিয়ে উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ করে ১৮ মে এজেন্ট ও ডিস্ট্রিবিউটরদের জন্য ‘বাঙালি বিলাস’ প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে। সিনেমাটি এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিবেশক ও চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজকদের আগ্রহ ও কৌতূহল তৈরি করেছে।

আন্তর্জাতিকভাবে ‘Tractatus Bengalium’ নামে পরিচিত ‘বাঙালি বিলাস’ চলচ্চিত্রটি সমসাময়িক বাংলাদেশের প্রচলিত চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ১৯০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই সিনেমা যৌনতা, নারীবাদ, বিশ্বাসঘাতকতা ও রাজনীতির মতো জটিল ও সংবেদনশীল বিষয়গুলোকে একত্র করে গড়ে তুলেছে এক ব্যতিক্রমী সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা।

পরিচালক এবাদুর রহমান বলেন, এটি ফিল্ম-উইদিন-এ-ফিল্ম কাঠামোয় তৈরি, যেখানে সিনেমার ভেতরেই আরেকটি সিনেমার আখ্যান বোনা হয়েছে। গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে দুটি মুসলিম নারী চরিত্র- মিত্রা ও রুশতী। যারা এক পুরুষতান্ত্রিক নির্মাতার হাত থেকে নিজেদের শরীর ও ভাষার উপর নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে নেমেছে। এটি শুধুমাত্র এক নারীবাদী গল্প নয়; বরং নারী, শরীর ও বিশ্বাসকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার একটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া।

‘বাঙালি বিলাস’- এ অভিনয় করেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী ঋ সেন, যিনি কিউ পরিচালিত বিতর্কিত সিনেমা ‘গান্ডু’- তে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। এ ছাড়াও আছেন বাংলাদেশের ফারহানা হামিদ, নাঈমা তাসনিম, শতাব্দী ওয়াদুদ ও আজাদ আবুল কালামের মতো গুণী শিল্পীরা।

ছবির সিনেমাটোগ্রাফিতে ছিলেন রাওয়ান সায়েমা ও মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান। সম্পাদনায় আছেন বার্লিনের অস্কার লোসার এবং ঢাকার ইকবাল কবির জুয়েল। এর শব্দ পরিকল্পনা করেছেন ফিনল্যান্ডের খ্যাতিমান শব্দ শিল্পী মিকা নিনিমা। এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সিনেমাটিকে দিয়েছে এক বৈশ্বিক মাত্রা, যা কেবল বাংলাদেশের গল্প নয়, বরং বিশ্ববাসীর কাছে এক সর্বজনীন বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম।

‘বাঙালি বিলাস’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক আন্দোলন। পরিচালক এবাদুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি প্রথাগত ‘বাঙালি ছবি’র কাঠামোকে ভেঙে নতুন চলচ্চিত্র ভাষা নির্মাণ করতে চেয়েছেন। নারীর অবস্থান, শরীরের রাজনীতি এবং বিশ্বাসের দোলাচল-সবকিছুকে এক ভিন্ন আঙ্গিকে হাজির করা হয়েছে।

এই সিনেমা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বাজারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে, যা দেশের সিনেমা শিল্পের জন্য একটি বড় অর্জন। বিশেষ করে মার্শে দ্যু ফিল্মের মতো বিশ্ববাজারমুখী প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত হওয়া মানে হলো আন্তর্জাতিক পরিবেশক, চলচ্চিত্র উৎসব ও সমালোচকদের সরাসরি নজরে আসা।

 

 

Raj/FJ
আরও পড়ুন