এপ্রিল মাসজুড়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। তীব্র গরমে চরম অস্বস্তিতে আছে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণি। অতীতের তুলনায় এবার এপ্রিল মাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববারও আগামী তিন দিনের জন্য হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত মানুষ প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে চান। এজন্য অধিকাংশ লোক গুগলের দ্বারস্থ হন। গুগল সার্চ ইঞ্জিনে তাপমাত্রা দেখার সময় দুই রকম তথ্য সামনে আসে। নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা সার্চ করলেই বিরাজমান তাপমাত্রা বড় করে দেখানো হয়। বড় অক্ষরে লেখা ওই তাপমাত্রার নিচে ছোট করে লেখা থাকে ‘ফিলস লাইক’ ...। যেটি মূলত অনুভূত হওয়া তাপমাত্রা নির্দেশ করে।
কোনো এলাকায় তাপমাত্রা যদি ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে ‘ফিলস লাইক’-এ তার চেয়ে তিন থেকে চার ডিগ্রি বেশি দেখানো হয়। অর্থাৎ প্রকৃত তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি হলেও গরম অনুভূত হয় ৪০ বা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। যেমন, রোববার বেলা ১টায় ঢাকায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখায় গুগল সার্চ ইঞ্জিনে। সেখানে ‘ফিলস লাইক’-এ দেখাচ্ছিল ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা যেভাবে তাপমাত্রা রেকর্ড করি তাতে ‘ফিলস লাইক’ বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, আমরা সরাসরি রোদের মধ্যে তাপ মাপি না। আমরা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতিতে তাপমাত্রা রেকর্ড করি। স্বীকৃত পদ্ধতি হলো স্টিভেনসন স্ক্রিনের মাধ্যমে তাপমাত্রা রেকর্ড করা। সে পদ্ধতিতে থার্মোমিটার থেকে বাতাসের তাপমাত্রা নেওয়া হয়। যদি আমরা সরাসরি রোদের তাপমাত্রা রেকর্ড করতাম, তাহলে প্রকৃত তাপমাত্রা আরও বেশি হতো। রোদে গেলে যেটা ‘ফিল’ হচ্ছে সেটাকেই গুগল ‘ফিলস লাইক’ বলছে। এছাড়া বর্তমানে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। এজন্য গরমে বেশি অস্বস্তি অনুভূত হচ্ছে।
অপর আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের মাঠে কিছু স্টিভেনসন স্ক্রিন স্থাপন করা আছে। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থার শর্তপূরণ করে স্টিভেনসন স্ক্রিনের মাধ্যমে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এই স্টিভেনসন স্ক্রিনের ভেতরে থার্মোমিটার থাকে। এই থার্মোমিটার থেকেই আমরা বাতাসের তাপমাত্রা নিয়ে দিনের ওই সময়ের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নির্ধারণ করি।
তিনি বলেন, স্টিভেনসন স্ক্রিনের ভেতরে বাতাস যায় কিন্তু রোদ যায় না। থার্মোমিটারের গায়ে সরাসরি রোদ না পড়লেও বাতাসের তাপমাত্রাটা যায়। এই পদ্ধতিতেই সারাবিশ্বে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, ‘ফিলস লাইক’ তাপ মাপা হয় কোনো এলাকার সম্ভাব্য তাপমাত্রার পূর্বাভাস, ওই এলাকার আর্দ্রতা এবং বাতাসের গতিবেগ অনুযায়ী। আর তাপমাত্রা বলতে বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট এলাকার বাতাসের তাপমাত্রা। কিন্তু রাস্তাঘাটে বের হলে যে তাপ অনুভূত হয় সেখানে বাতাস ছাড়াও আরও কিছু বিষয়ের প্রভাব থাকে। সে কারণে মূল তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হয়। সেটাকেই ‘ফিলস লাইক’ দেখায়।
