ভারতে নারীদের মধ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে সময়ের আগে মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া। এমনকি হৃদরোগে আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলছে।
২০২৪ সালে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যেসব নারীদের স্বাভাবিক সময়ে (৪৫ থেকে ৫০ বছর বা ৫০ এর বেশি) রজঃনিবৃত্তি হয়েছে, তাদের তুলনায় সময়ের আগে মেনোপজ হয়েছে এমন নারীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। শুধু হৃদরোগই নয়, মেনোপজের পর সাধারণত নারীদের হাড়ের সমস্যা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, হট ফ্ল্যাশ-ইত্যাদির মতো যেসব সমস্যা দেখা যায়, এসবের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায় প্রিম্যাচিওর মেনোপজের ক্ষেত্রে।
কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রধান ডা: অরূপ দাস বিশ্বাস বলেছেন, ‘মেনোপজ নিশ্চিতভাবেই নারীদের হৃদরোগে আক্রান্তের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে। যে নারীদের সময়ের আগে মেনোপজ দেখা যায়, তাদের এ ঝুঁকি আরো বেশি।’
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: কৃষ্ণা ঘোষ বলেন, ‘মেয়েদের ঋতুচক্র একটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা একটা বয়সে শুরু হয় এবং একটা বয়সে এসে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কার ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব কোন বয়সে শুরু কিংবা বন্ধ হবে তা নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। হরমোন, ওবেসিটি, লাইফস্টাইল ইত্যাদি ফ্যাক্টর কাজ করতে পারে। একইভাবে মেনোপজ কোন বয়সে এসে হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে ভারতে নারীদের সাধারণত, ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে মেনোপজ দেখা যায়। আবার তার আগেও দেখা যায়।’
সাধারণত, ৪৫ বছরের নিচের নারীদের মেনোপজ হলে তা আর্লি মেনোপজ। যদি ৪০ বছরের আগে হয়, তাহলে তাকে প্রিম্যাচিওর মেনোপজ বলে।
ডা: কৃষ্ণা ঘোষ বলেন, ‘মেয়েদের ঋতুচক্রের সঙ্গে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণ এবং তাদের মাত্রার তারতম্যের যোগ রয়েছে। এই দুই হরমোন মেয়েদের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই হরমোনগুলো শুধু নারীদের প্রজননের ক্ষেত্রে সহায়ক নয়, অন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রয়েছে। এই হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে তার প্রভাব পড়ে শরীরের ওপর।’
এ বিষয়ে চিকিৎসক ডা: অরূপ দাস বলছেন, ‘পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে নারীদের মেনোপজ না হওয়া পর্যন্ত পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজের ঘটনা কম। তবে ডায়াবেটিস থাকলে তা প্রযোজ্য হয় না। সেক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়েরই কার্ডিওভাস্কুলার ডিসিজের সমান ঝুঁকি থাকে। নারীদের মেনোপজের পর প্রথম দিকে, পুরুষ ও নারী দু'জনেরই কার্ডিওভাস্কুলার ডিসিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সমান সমান। তারপর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে নারীদের ওই ঝুঁকি বেড়েও যায়।’
‘প্রিম্যাচিওর মেনোপজের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়তে পারে’ বলেও তিনি জানিয়েছেন। তার কথায়, প্রিম্যাচিওর মেনোপজের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, সাধারণভাবে যে সময়ে নারীদের মেনোপজ হয় সেই বয়সে একজনের মেনোপজ হয়েছে এবং একজনের প্রিম্যাচিওর মেনোপজ হয়েছে- এই দু’জনকে তুলনা করলে দেখা যাবে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কার্ডিওভাস্কুলার ডিসিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো বেশি। এর কারণ, ইস্ট্রোজেন লেভেল।
ডা: দাস বিশ্বাস আরো বলছেন, ‘ইস্ট্রোজেন হার্টকে প্রোটেকশন দেয়। ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে গেলে তাই হার্টের ওই প্রটেকশনও চলে যায়। পাশাপাশি ধমনীর একেবারে ভেতরের আস্তরণ অর্থাৎ এন্ডোথেলিয়াম ভাস্কুলার সিস্টেমকে ভালো থাকতে সাহায্য করে ইস্ট্রোজেন। এন্ডোথেলিয়াম ডিসফাংশান হলে বা সহজভাবে বলতে গেলে সঠিকভাবে কাজ না করলে ধমনীর ক্ষতি দ্রুত হয় এবং হার্টের ক্ষতিও তাড়াতাড়ি হয়। ইস্ট্রোজেন এন্ডোথেলিয়াম ডিসফাংশানও প্রিভেন্ট করে।’
চিকিৎসক বাসব মুখার্জীর মতে, ইস্ট্রোজেন হার্টকে ভালো রাখে, কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গেও হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। যেহেতু একাধিক কারণে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়, তাই একটা বয়সের পর বলা মুশকিল এর পেছনে কোন ফ্যাক্টর কতটা কাজ করেছে যেমন বয়স, লাইফস্টাইল, মেনোপজ না অন্য কোনো কারণ। ৫০ বছরের পর এই সমস্ত ফ্যাক্টর মিলে মিশে যায়। তবে ইন্ডিভিজুয়ালি আমরা বলতে পারি মেনোপজের সঙ্গে হৃদরোগের একটা সম্পর্ক রয়েছে এবং মেনোপজের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
চিকিৎসকদের মতে মেনোপজের উপসর্গ দেখা দেওয়ার সময় থেকেই একাধিক বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপও নিতে হবে।
ডা: দাস বিশ্বাস বলেন, হরমোনের মাত্রার তারতম্যজনিত সমস্যার মোকাবিলার জন্য মেডিকেল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি রয়েছে। অর্থাৎ হরমোনের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য চিকিৎসা। মেডিকেল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি কতদিন হবে এবং তার মাত্রা কত তা স্থির করবেন চিকিৎসক। কারণ এর বিভিন্ন সাইড এফেক্ট দেখা যায়।
এছাড়া নির্দিষ্ট কেসে নির্দিষ্ট রোগের ঝুঁকি মাথায় রেখে তার চিকিৎসাও করা হয়। যেমন ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়া বা হৃদরোগের যদি কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে তার চিকিৎসা করা হয়। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করা, ব্যালেন্সড জীবনযাত্রা ইত্যাদি প্রয়োজন। পাশাপাশি মন ভালো রাখাও দরকার। কারণ মেনোপজের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগ রয়েছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
রাতের খাবারের পর হাঁটার স্বাস্থ্য উপকারিতা
নতুন ভ্যাকসিন ও ওষুধ উৎপাদনে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
জেন-জিদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ডায়াবেটিস নিয়ে সতর্কতা
পুরুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাঁচা হলুদের যাদুকরী উপকারিতা