নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন শনিবার (২৯ অক্টোবর) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, ২৬ অক্টোবর ঢাকা প্রেসক্লাবে আমি কলামিষ্টদের একটি অনুষ্ঠানে যে বক্তব্য দিয়েছি সেই বক্তব্যের সাথে ১৭ টি মিডিয়ায় হেডলাইনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই। হেডলাইনগুলোতে বলেছে আমেরিকা যুদ্ধবাজ অমুক তমুক, এ কথা আামদের মুখেও আসেনি।
কিন্তু ১৭ টি গণমাধ্যম এ ধরণের মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। যা বানোয়াট কাল্পনিক সংবাদ পরিবেশন করে। মনে হয় আমাদের দেশে যারা সংবাদিকতা করেন তাদের দুর্বলতা আছে। এদের পরিপক্কতা দরকার। আপনারা সেভাবে সজাগ হলে খুব খুশী হবো। সাংবাদিক হিসেবে তারা যেটা করেছেন তা লজ্জার বিষয় আর আপনাদের জন্য দু:খের বিষয় যে আপনাদের সহকর্মীরা এ ধরণের বানোয়াট জিনিষ প্রকাশ করেছেন।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন এবং সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার বিসিএস (এফএ) অ্যাম্বাসেডর্স (এওফা) সদস্যরা জাতির পিতার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ও পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
ড. মোমেন বলেন, টিভি চ্যানেলসহ এ ১৭ মিডিয়ায় আমি যে জিনিষগুলো আমার ধারে কাছে বলেনি সেইসব হেডলাইন করছে। তারা হয় বাংলা বুঝে না নতুবা কোনো উদ্দেশ্যর কারণে মিথ্যা প্রচার করেছে। মিথ্য প্রচার কারণে যে অসুবিধা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার হয়ত মনে করবে আমরা তাদের শত্রু। এমনভাবে প্রচারণা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে শত্রু বানানোর প্রচেষ্ঠা হয়েছে। এটি খুবই দু:খজনক ও লজ্জাজনক। এ নিয়ে সাংবাদিকদের গবেষণা করা উচিৎ কেন এত নিম্নমানের এ সাংবাদিকতা হলো। আমি জীবন শুরু করেছিলাম সাংবাদিকতা করে। আমাদের একটা মান ছিলো, নীতি ছিলো। তারা এগুলোর ধারে কাছে নাই।
এদিকে ২৭ অক্টোবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তীতে বলা হয়েছে,
২৬ অক্টোবর বুধবার কিছু মিডিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি’র নামে অসত্য ও ভিত্তিহীন উদ্ধৃতি দিয়ে (যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেননি) বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করে। এ বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট মিডিয়াগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করে এধরণের অসত্য সংবাদ প্রচার বন্ধের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কিছু কিছু মিডিয়া ঐ সকল সংবাদ প্রচার বন্ধ না করে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এপ্রেক্ষিতে মিডিয়ায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করছে যে, প্রতিবাদ জানানোর পরেও কিছু মিডিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে অসত্য ও ভিত্তিহীন উদ্ধৃতি দিয়ে (যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেননি) পূর্বানুরূপ বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মিডিয়াগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম আয়োজিত “জাতিসংঘের আঙিনায় শেখ হাসিনা” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন। ঐ অনুষ্ঠানে দেশের মূলধারার অধিকাংশ মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত সাংবাদিকগণ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিজেরা শুনেছেন এবং টিভি ক্যামেরা ও মোবাইলে ধারণ করেছেন। ঐ অনুষ্ঠানের পর কিছু মিডিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে অসত্য ও ভিত্তিহীন উদ্ধৃতি দিয়ে (যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেননি) টিভি স্ক্রল/ টিভি চ্যানেলের ইউটিউবের ক্যাপশন/ টিভি সংবাদের স্টোরি/ বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইনের মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার শুরু করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হওয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে উদ্ধৃত, এধরনের সংবাদগুলো হলো; “ড. মোমেন বলেছেন “আমেরিকার কাজই যুদ্ধ করা, নয়তো তাদের অর্থনীতি চলবেনা” (এনটিভি), “যুদ্ধ ছাড়া আমেরিকার অর্থনীতি চলবেনা” (ডিবিসি নিউজ), “ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হলে তাইওয়ানে যাবে আমেরিকা” (সময় টিভি), “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যুদ্ধনির্ভর” (সময় টিভি), “যুদ্ধ ছাড়া মার্কিন অর্থনীতি সচল নয়” (যমুনা টিভি), “যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধপ্রিয় দেশ, যুদ্ধ ছাড়া দেশটির অর্থনীতি সচল থাকে না” (ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি), যুদ্ধেই সচল থাকে যুদ্ধপ্রিয় আমেরিকার অর্থনীতি” (দেশ টিভি), “ড. মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধপ্রিয় দেশ” (এটিএন নিউজ), “সব দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করাই তাদের মূল কাজ” (চ্যানেল ২৪), “যুদ্ধের জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সচল থাকে” (এসএ টিভি), “যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যুদ্ধ ছাড়া চলবেনা” (রেডিও টুডে), “যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করাই হল যুক্তরাষ্ট্রের মূল কাজ” (আমাদের সময় ডটকম), “যুক্তরাষ্ট্রের কাজই হলো যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা” (ইনকিলাব), “আমেরিকা যুদ্ধপ্রিয় দেশ, যুদ্ধ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অচল” (দেশ রূপান্তর), “যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করাই হলো যুক্তরাষ্ট্রের মূলকাজ” (মানব জমিন), “আমেরিকার অর্থনীতি যুদ্ধ ছাড়া চলবেনা” (দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর)। এছাড়াও অন্যকোন মিডিয়ায় এধরনের সংবাদ প্রচার হয়ে থাকতে পারে এবং সেগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন উৎস থেকে জানার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এধরনের শিরোনাম দিয়ে সংবাদগুলোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নামে অসত্য ও ভিত্তিহীন উদ্ধৃতি দিয়ে যা প্রচার করা হয়েছে বা হচ্ছে তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে অসত্য ও ভিত্তিহীন উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে তাঁকে দেশের জনসাধারণ ও বন্ধুপ্রতিম দেশের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং বিশেষ কোন উদ্দেশ্য সাধনের হীন অপচেষ্টা বলে ধারণা করা যায়- যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারের জন্য ভুল স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট মিডিয়াগুলোকে দুঃখ প্রকাশসহ সঠিক সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি দূর করতে পুনরায় অনুরোধ জানানো হলো। একইসাথে সংশ্লিষ্ট মিডিয়াগুলো, উক্ত অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারের জন্য, তাদের প্রতিষ্ঠানের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশের স্বার্থ এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখবে বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যাশা করে।
