সরকারের নিয়ন্ত্রণ তথা পুলিশি পাহারায় থাকা অবস্থায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানায় লুটপাটে ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক ড. মাহমুদুর রহমান। তবে বর্তমানে প্রেসের কিছু না থাকলেও বিকল্প ব্যবস্থাপনায় অন্য প্রেস থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই আমার দেশ পত্রিকা ছাপা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। এজন্য অফিস সেটাপসহ অন্যান্য প্রস্তুতির কথা জানান মাহমুদুর রহমান।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আমার দেশ পত্রিকার পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘ ১৬ বছরের জালিম-ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এক দানবীয় সরকারের পতন হওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা মুক্ত পরিবেশে এই মতবিনিময় ও প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত হতে পেরেছি-এটা আনন্দের অনুভূতি। আর বেদনার অনুভূতি হলো- আমার সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিভিত্তিক লড়াইয়ের যে হাতিয়ার আমাদের দেশ পত্রিকার ছাপাখানাকে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার গত ১১ বছর ধরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। দু-দিন আগে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও দুইজন ওসি তালা ভেঙ্গে আমাকে বুঝিয়ে দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে ঢুকেই আমরা দেখতে পেয়েছি, প্রেসের কিছুই অবশিষ্ট নাই। এমনকি ইলেক্ট্রিক প্যানেল পর্যন্ত টুকরো টুকরো করে নিয়ে গেছে। শুধুমাত্র ভাঙ্গা সম্ভব না হওয়ায় দুটি মেশিনের খন্ডাংশ আছে। সব কিছু টুকরো টুকরো করে নিয়ে গেছে। মনে হচ্ছিল শেখ হাসিনা আমার দেশ সম্পাদক তথা আামাকে টুকরো টুকরো না করার জিঘাংসা মিটিয়েছে, প্রেসকে টুকরো টুকরো করেছে। এটাই ফ্যাসিবাদের চরিত্র। সরকারি প্রতিনিধিরা বাস্তব অবস্থা দেখেছেন এবং মিডিয়ার সামনে প্রেসের ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন।
আমার দেশ নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রেসতো নাই, শুধু জমি আছে। নতুন একটা প্রেস করতে প্রথমত টাকা দরকার-ওই টাকা আমার নেই। আমাদের যারা পরিচালক তাদের কারও অত টাকা নেই এবং আমরা কর্পোরেট মিডিয়া না। বাংলাদেশে একমাত্র আমার দেশ কোন কর্পোরেট মিডিয়া না। আমার দেশ আমরা নিজেরা কষ্ট করে চালাই। অন্যরা কর্পোরেট স্বার্থে পত্রিকা চালায়, আমার সেই স্বার্থ নেই। আমি অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে লেখালেখি করার জন্যই পত্রিকা চালাতে চাই। দ্বিতীয়ত প্রেস করতে সময় লাগবে। কিন্তু আমি মনে করি, বাংলাদেশ বর্তমানে যেই ষড়যন্ত্রের মুখে দাঁড়িয়ে আছে সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় শক্তিশালী মিডিয়া দরকার। যে মিডিয়া কোন কর্পোরেট স্বার্থে নয়, কোন দলের স্বার্থে নয় বাংলাদেশের জন্য লড়বে। জনগণ ও সাংবাদিকদের অধিকারের জন্য লড়বে। সেইজন্য আমরা অন্য প্রেস থেকে ছাপার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুই তিনটি প্রেসের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তাও মোটামুটি ফাইনাল হয়েছে, ইনশাআল্লাহ ছাপানোর ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু ছাপানোর আগে মেটার তৈরি করতে তো অফিস দরকার। অফিসে অন্তত ১০০ কম্পিউটারসহ আধুনিক টেকনোলজির জিনিস দরকার। সেটাও সেটাপ করতে হবে। সাংবাদিকদের দরকার। আমাদের মধ্যে যারা সাংবাদিকরা আছেন, তারাতো কাজ করতে আসবেন, তাদেরকে সেবার মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। ধরে নেবেন যে, তারা একবছর আমার দেশের সঙ্গে লড়াই করবেন। তাদের মেধা অনুযায়ী যে বেতন ভাতা দেয়া উচিত সেটা দেয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই। সেটাও আমাদের সীমাবদ্ধতা। তবে আমার ধারণা আমার সহকর্মীরা আমার সঙ্গে লড়াই করতে রাজি হবেন। সেটাও বড় সমস্যা না, বড় সমস্যা হলো অফিস সেটাপ করা। সেজন্য আমরা অফিস খুঁজছি। তবে একটি সুসংবাদ হলো-যতই কষ্ট হোক, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আমার দেশ পত্রিকা আপনাদের মাঝে তুলে দিতে পারবো। আমার দেশ আবার আসবে, স্বাধীনতার কথা বলবে. ভারতীয় সাম্প্রসারণবাদ ভারতীয় হেজেমনির বিরুদ্ধে কথা বলবে। বাংলাদেশের লুটেরা ব্যবসায়ী, গুম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলবে আমার দেশ। মানবাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে আওয়াজ তুলবে আমার দেশ। আপনারা সহযোগিতা করুন। সরকারেরও সহযোগিতা লাগবে। আইনি বেড়াজালে, আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালে যেন আমার দেশকে পড়তে না হয়।
মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার দেশ পুড়িয়ে দেয়া, পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়া, শতশত সাংবাদিক-কর্মচারীর বেকার হওয়া, আমাকে জেলে নেয়া, রিমান্ডে নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টা, র্যাবের আয়না ঘরে নেয়া এবং থানায় আমাকের হত্যা চেষ্টা এবং আমার দেশ ছাপাখানা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় লুটপাট করে নেয়া হলো-এতগুলো ঘটনা ঘটলেও কোন মিডিয়ায় সমালোচনা শোনা যায়নি। কোন সম্পাদকতো কথা বলেননি। যেসব সম্পাদক বাক স্বাধীনতার কথা বলেন, যারা নির্লজ্জভাবে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে সমর্থন দিয়েছেন, এসব বড় বড় কোন সম্পাদকের মুখে শুনিনাই যে, আমার দেশের ওপর এত জুলুম মেনে নেয়া যায় না।
বর্তমান মিডিয়া মালিক-সম্পাদকদের চরিত্র সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, সংগ্রামের প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদকে আওয়ামী ছাত্রলীগের গুন্ডারা দাড়ি ধরে টেনে নিয়ে যায়, নির্যাতন করে। কোথায় ছিলেন বাংলাদেশের সম্পাদকরা। নোয়াব কোথায় ছিল। কারও মুখেতো প্রতিবাদ শুনিনাই। অথচ তার মত বিজ্ঞ সম্পাদক কয়জন আছেন? তিনি বুদ্ধিজীবী না? নাকি তিনি ইসলামের কথা বলেন, তার দাড়ি আছে এজন্য তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা কথা বলেননি। আরেকজন ইত্তেফাকের সম্পাদক মইনুল হোসেনের দাড়ি ছিল না। তাকেও আদালত চত্ত্বরে নাজেহাল করা হয়েছে।
আমার দেশ- এর বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরীর পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে পত্রিকাটির নগর সম্পাদক এম আবব্দুল্লাহ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, আমার দেশ ইউনিট চিফ বাছির জামাল ও প্রেস ম্যানেজার গোলাম জিলানী উপস্থিত ছিলেন।
