অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘ঢাকা স্ট্রিম’-এর গ্রাফিক ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের (২৮) আত্মহত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের ২৪৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এক বিবৃতিতে তারা এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি একটি সম্ভাবনাময় নারী সংবাদকর্মীর অকাল ও অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু, যা গোটা সাংবাদিক সমাজ এবং সচেতন নাগরিকদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, স্বর্ণময়ী বিশ্বাসসহ মোট ২৬ জন সহকর্মী প্রতিষ্ঠানটির বাংলা কনটেন্ট এডিটর আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, অশোভন আচরণ ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ আনেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে ৯ জন নারী সাংবাদিক ছিলেন। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আটটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনলেও প্রতিষ্ঠানটি আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং অভিযোগ পাওয়ার পরেও তাকে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম ইফতেখার মাহমুদ এবং মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান এই ঘটনার নৈতিক ও প্রশাসনিক দায় এড়াতে পারেন না। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং অভিযোগ তদন্তের সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ বাধ্যতামূলক হলেও সেটিও মানা হয়নি।’
সাংবাদিক স্বর্ণময়ীর সহকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ সময় বিচার না পাওয়ায় তিনি চরম মানসিক চাপে ভুগছিলেন এবং হতাশা ও বিষণ্ণতার মধ্যে ছিলেন। শেষপর্যন্ত গত সপ্তাহে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন।
এই ঘটনাকে দেশের নারীকর্মীদের জন্য একটি ভয়ংকর বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে অভিহিত করে বিশিষ্টজনরা বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ও তার বিচারের অভাব আমাদের সমাজে এখনো এক নির্মম বাস্তবতা। নারীরা নিরাপদ কর্মপরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এবং অনেক ক্ষেত্রে বিচারহীনতা আত্মহননের মতো চূড়ান্ত পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
তারা বিবৃতিতে তিনটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেছেন-
১. অভিযুক্ত আলতাফ শাহনেওয়াজসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. ঢাকা স্ট্রিম কর্তৃপক্ষের ভূমিকা, বিশেষ করে শীর্ষ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায় এড়ানোর চেষ্টার বিষয়টি তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
৩. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতি প্রদানকারীদের মধ্যে রয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহান, অভিনেতা ও নাট্যপরিচালক কচি খন্দকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা দীপংকর দীপনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি নারীপক্ষের
সাদুল্লাপুরে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন