ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

মায়ের বিশালত্ব বুঝতে অক্ষম তারা

মা দিবসে দুঃখিনীদের বুকফাটা কান্না

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৬ পিএম

আমেনা বেগম, বয়স ৫৮। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ান রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিভিন্ন মহলায়। এই বয়সেও মাকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে বাধ্য করছে তারই দুই সন্তান।

বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে কথা হয় দুই সন্তানের এই জননীর সাথে। মোহাম্মদপুরের নবীনগর ৪ নম্বর রোডে কখনও ছেলের বাসায় কখনও মেয়ের বাসায় থাকেন তিনি। প্রশ্ন করতেই দুই গাল বেয়ে নামে অশ্রুর ধারা। চলে যান ফেলে আসা সোনালী অতীতে। 

তিনি জানান, ২৫ বছর আগে স্বামী মারা যান। একমাত্র ছেলে ও মেয়ের জীবন বাঁচানোর জন্য তাদের কোলে নিয়ে গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসেন। বহু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন এ বয়সে। কখনও বাসাবাড়িতে বোয়ার কাজ, কখন ইট ভাঙার কাজ করে করে ছেলে-মেয়েকে বড় করেছেন।

আমেনার অতীত যতটা না কষ্টের তারচেয়ে ভয়ঙ্কর বর্তমানে কষ্ট ও দুঃখের জীবন। চার বছর আগে একমাত্র ছেলেটাও না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করে। এর আগে অন্য এক ছেলের হাত ধরে গোপনে বিয়ে করেছে একমাত্র মেয়ে।

ছেলে মেয়ে দুজনই এখন সংসার জীবনে প্রতিষ্ঠিত। তবুও আর্তচিৎকার থামেনি মা আমেনার। ছেলে ও তার স্ত্রীর চাপে রোজ বেরিয়ে পড়তে হয় ভিক্ষার খুঁজে। শরীরের দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগ। বয়সের কারনে নুয়ে পড়া শরীর নিয়ে একদিন ভিক্ষা করতে ঘর থেকে না বের হলে শুনতে হয় ছেলে ও তার স্ত্রীর নানা রকম কটুক্তি।

জানালেন, মাঝেমধ্যে ছেলে ও তার স্ত্রীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চলে যান মেয়ের কাছে। সেখানেও একি ধরনের অত্যাচার। দুঃখিনী এই মা আজও কোন দিবস রজনীর ভালোবাসা ও বিন্দুমাত্র সুখের টের পাননি! আর তার সন্তানও বুঝতে অক্ষম মায়ের বিশালত্ব।

অপরদিকে রাজধানীর মিরপুরে দক্ষিণ পাইকপাড়ায় ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ বৃদ্ধাশ্রমে প্রতিদিনই বাড়ছে বয়সী মায়েদের সংখ্যা। এখানে এমন বহু মায়েরা আছেন তাদের সন্তান বেঁচে থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর নিবাসে কাটাচ্ছেন। শুনছেন না মা ডাক, দেখছেন না প্রিয় সন্তানের মুখ। আদরের সন্তানরাই হৃদয়হীন সমাজের সদস্য হয়ে নিজ মাকে এখানে ফেলে রেখেছেন দিনের পর দিন!

কথা হয় নিবাসিনী বৃদ্ধ রোকেয়ার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে বৃদ্ধাশ্রমে আছি। ছেলে মাঝেমধ্যে ফোনে খবর নিলেও দেখতে আসে না। তার মুখে মা ডাক শুনি না কত বছর হবে জানি না। এমনটি বলেই অঝোরে কেঁদে ফেললেন রোকেয়া। আমার বুকজুড়ে রাজ্যের দুঃখ। মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। কষ্ট করেছি এই সন্তান সন্তান করে। কত সুখ বিসর্জন দিয়েছি তার জন্য। অথচ সেই সন্তানই আজ মা বিহীন বউ-বাচ্চা নিয়ে আনন্দে দিন কাটাচ্ছে।

কথা হয় রাজধানী শ্যামলী রিং রোড ‘গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লিমিটেড’-এর নারীকর্মী তাছলিমার সঙ্গে। তার পুরো জীবনটাই বিষাদে ভরপুর। বছর পাঁচেক আগে দুই বছরের শিশুকন্যা ঝর্ণাকে কোল থেকে কেড়ে নিয়ে তার স্বামী তালাক দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন। বহু বিচার সালিশ করে ঝর্ণাকে কাছে পেলেও এক বছর আগে আবারও তার বাবার নিকট তাকে ফেরত দিতে হয়েছে। গত এক বছর ধরে ঝর্ণাকে দেখছেন না মা তাছলিমা। কর্মক্ষেত্রে এলেও সারাক্ষণ একমাত্র আদরের মেয়ের জন্য অশ্রু ভেজা থাকে তাছলিমার। শুনছেন না মিষ্টিমধুর সেই প্রিয় মা ডাক।

আরও পড়ুন