মহান মে দিবস আজ। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা দিন। সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পালন করা হয় এ দিবস। বিশ্বে ৮০টি দেশসহ বাংলাদেশেও প্রতিবছর মে দিবস পালিত হয়। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে দিনটি পালনের আয়োজন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
মহান মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকাসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও টকশো সম্প্রচার করবে।
মহান মে দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শ্রম ও কর্মসস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ও কেন্দ্রীয় তহবিল হতে দুস্থ শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করা হবে।

এই দিবসের সূচনা মূলত আজ থেকে ১৩৮ বছর আগে আমেরিকান সমাজে। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকাতে শুরু হয় শ্রমিক আন্দোলন। অধিকার আদায়ে শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা সেদিন পথে নেমেছিলেন। ওই দিন আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক হতাহত হন। তাঁদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টা করার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এর আগে ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হতো এক একজন শ্রমিককে। কিন্তু বিনিময়ে পারিশ্রমিক ছিল খুবই কম, যা তাদের তাদের জীবনধারণে পর্যাপ্ত ছিল না। এ নিয়ে ধীরে ধীরে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে তাঁদের মনে। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ এই আন্দোলন।
এ ঘটনার দুই বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেসে শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে পালনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৮৯১ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।
সেই থেকে শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা দিনে আট ঘণ্টা করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, এই দিনটিকে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই দিনে ছুটির কথাও বলা হয়। সেই থেকে আজও মে মাসের প্রথম দিনটিকে (মে ডে) শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
মে মাসের প্রথম দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মিছিল, সভা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয় দিবসটি।
শ্রমিকদের অধিকার ও দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়।
