জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ নির্বাসন জীবন শেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ বিমানে ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে কোলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বিপদগামী একদল সেনা কর্মকর্তার নির্মম বুলেটের আঘাতে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এসময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে ঘাতকগোষ্ঠী।
বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক তেমনি এক ক্রান্তিলগ্নে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করা হয় জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার হাতে।
বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বকে ভয় পায় ঘাতকগোষ্ঠী। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে না দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি। সেদিন রাজধানী ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিল আর স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিও সেদিন লাখ লাখ মানুষের মিছিলকে গতিরোধ করতে পারেনি। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে সেদিন সারা বাংলাদেশের মানুষের গন্তব্য ছিল রাজধানী ঢাকা। স্বাধীনতার অমর স্লোগান, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম পিতৃ হত্যার বদলা নেব’; ‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে’। ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’।
দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
সেদিন বিকেল সাড়ে চারটায় আকাশে যখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি দেখা যায় তখন সকল নিয়ন্ত্রণ আর অনুরোধ আবেদন অগ্রাহ্য করে হাজার হাজার মানুষ বিমান বন্দরের ভেতরে ঢুকে যায়। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বিমানটি অবতরণ করে। জনতা একেবারেই বিমানের কাছে চলে যায়।
শেখ হাসিনা যাতে সেদিন দেশে ফিরে আসতে না পারে সেজন্য তারা গভীরতম ষড়যন্ত্র করে তাদের সকল ষড়যন্ত্র ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বভূমে বীরের বেশে ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
দেশে ফিরে পুনরায় আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন। বাঙালি জাতি শেখ হাসিনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি খুঁজে পেলেন। হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র উদ্ধারে মনোনিবেশ করলেন তিনি। সারাদেশ চষে বেড়ালেন দলের সাংগঠনিক কাঠামো সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে। তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সকল নেতৃবৃন্ধকে ঐক্যবদ্ধ করলেন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে।
৮১ সালে শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি ছিল এবং দেশে ফেরার আগে-পরে তিনি কী কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন সেসবের আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করেছে দৈনিক খবর সংযোগ।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনে উন্নয়ন, অর্জন, আধুনিকতায় বদলে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রূপান্তরের রূপকার শেখ হাসিনা।
কাদের আরও বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার পর গণতন্ত্র, স্বাধীনতার আদর্শ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি সবই নির্বাসনে চলে গিয়েছিল। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনেই আমাদের গণতন্ত্র, স্বাধীনতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ফিরে এসেছে। তিনি এসেছিলেন বলেই গণতন্ত্র শৃঙ্খল মুক্ত হয়েছে। ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক ঐতিহাসিক দিনটি পালন করি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বদেশে এসেছিলেন বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই গণতন্ত্র শৃঙ্খল মুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছি। স্বপ্নের মেট্রোরেল হয়েছে। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করতে পেরেছি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন ওই মুহূর্তে খুনি মোশতাক-জিয়ার পাকিস্তানি ভাবধারার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির রামরাজত্ব চলছিল এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে মিনি পাকিস্তান গড়ার অশিষ্ট লক্ষ্যে তারা চলছিল। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য শেখ হাসিনার সেদিন ফিরে আসা শুধুমাত্র মুজিব আদর্শের কর্মীদের বাঁচাতেই নয় গোটা বাংলাদেশের যে সমস্ত মানুষ প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ এবং এদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার, হারানো গনতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারেরই তিনি আলোকবর্তিকা হয়ে ফিরে এসেছিলেন।
নাছিম আরও বলেন, ১৯৮১ সালে ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দু:স্বপ্নকে থেকে স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা শুরু হয় সামরিক জান্তার হাতে নিপীড়নের শিকার গণতান্ত্রিক মুক্তিকামী মানুষের। বাঙালি জাতি আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করে, বাঙালি জাতিকে নতুন করে নেতৃত্ব দেয়ার মানুষ খুঁজে পেয়েছিল যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি লুকায়িত ছিল। আলোর পথযাত্রী, এগিয়ে যাওয়ার আলোর দিশারি তিনি হলেন শেখ হাসিনা। সেদিন থেকেই নতুন স্বপ্ন আশা উদ্দীপনা নিয়েই ঐক্যের প্রতীক হিসেবে জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক এড আফজাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে যখন শেখ হাসিনা ফিরে আসেন তখন আওয়ামী লীগ বহুধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি যখন ফিরে আসেন তখন বাংলাদেশে ভয়ের সংস্কৃতি কাজ করছিল। হত্যা খুন সন্ত্রাস, ক্ষমতা পরিবর্তনের রক্তাক্ত পথ,সমস্ত কিছু ৭১ এর খুনি এবং ৭৫-এর খুনিদের দখলে ছিল। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের দু:শাসন চলছিল। সেই সময় জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে তিনি দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। এবং শেখ হাসিনার এই আগমনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতির একটা সাহসী প্রত্যাবর্তন ঘটে। এবং নতুন করে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শুরু হয়। তিনি ফিরে আসার মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ফিরে এসেছে। এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বেক আজ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দায়মুক্তির জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়, তিনি ফিরে আসাতেই যুদ্ধাপরাধীসহ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ১৭ মে এটা নিছক কোন নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল না। সে সময়ের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই এটা বিরাট একটা অর্থনহ বিষয়। এবং সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এতো বেশি কণ্টকাকীর্ণ ছিল যে এই সময়ে সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ মদদে শেখ হাসিনার। আগমন উপলক্ষে প্রতিরোধ কমিটি পর্যন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেদিন মুক্তিকামী স্বাধীনতা স্বপক্ষের জনতার তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখে সেদিন তারা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছিল। আমরা যদি আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলে সেদিন জীবনের ঝুঁকি থাকা স্বত্ত্বেও এটা জেনেও বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন তাহলে আজকে বাংলাদেশের হাল ধরা হতো না।
তিনি যদি সেদিন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশের বাহিরেই থাকতেন, যদি মনে করতেন জীবনের ঝুঁকি কমে গেলে দেশে যাবো সেই অবস্থায় থাকতেন, ঝুঁকি না নিতেন তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকশিত হতো না। এবং সেদিন তিনি জীবনের ঝুঁকি জেনেও স্বদেশে প্রত্যাবর্তন না করতেন তাহলে নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশেও পাকিস্তানি ভাবধারায় সামরিক গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে এদেশ পরিচালনা হতো। সেদিন সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে জয় করতে পেরেছিলেন বলেই আজকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় সঠিক পথে রেখে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আজকে আলোকিত ক্ষুধা-দারিদ্র, দুর্ভিক্ষমুক্ত বাংলাদেশ তার নেতৃত্বে আমরা পাচ্ছি।
আমিন আরও বলেন, তার সেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ ৭৫ এ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমাদের যে স্বপ্নটা দিনে দিনে ফিকে হয়ে যাচ্ছিলো সেটা আমাদের শুধুই স্বপ্ন হয়েই থাকেনি সেই স্বপ্ন আজকে বাস্তবেও ধরা দিয়েছে। সুতরাং এই দিনটা আমাদের জন্য চরম প্রাপ্তির একটা দিন, পরম প্রাপ্তির একটা দিন। এই দিনের গুরুত্বটি সারাদেশের সকল মানুষের কাছে আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস; অন্ধকারকে ভেদ করে আলোর পথে এগিয়ে চলার প্রত্যয়দীপ্ত একটি দিন।
একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্নি শপথে স্বৈরতন্ত্রের কপাট ভেদ করে মুক্তির মন্দির সোপান তলে আত্মনিবেদনের মন্ত্র-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিন।
মৃণাল কান্তি আরও বলেন, যদি প্রশ্ন করি? বঙ্গবন্ধু কন্যা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করলে কী সামরিক শাসনের নাগপাশ থেকে বাঙালি মুক্তি পেতো? বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতো? বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আদৌ কী বিচার হতো? বঙ্গবন্ধু কন্যা যদি না ফিরে আসতেন তাহলে কী এক সময়ের চরম খাদ্য সংকট বাংলাদেশ এভাবে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে জয় করতে পারতো? ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতো? হতো না!
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালির জাতীয় জীবনের একটি কালজয়ী ঘটনা। তাই ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায় থেকে আলোর পথে উত্তরণের কাণ্ডারী দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন অত্যাবশকীয় নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মের জানা উচিৎ, এই দেশটা কীভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র ও তাদের উত্তরসূরীরা পিছিয়ে দিয়েছিল। আর সেই অনিশ্চয়তার গিরিখাদ থেকে সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কীভাবে বাঙালি জাতিকে সফলতার উচ্চশিখরে পৌঁছে দিচ্ছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে অবশ্যই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করা জরুরি এবং একই সঙ্গে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কর্মসূচিতে সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকদের অংশগ্রহণ করা উচিৎ। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জ্বলন্ত শপথ নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বুটের তলায় পিষ্ট হওয়া সাহস এবং বেয়নেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শক্তি পুনরুজ্জীবনের দিন। যদি জিজ্ঞেস করি? বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে না ফিরলে কি বাঙালিরা সামরিক শাসনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেত? বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়? বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কি আদৌ বিচার হয়েছিল? বঙ্গবন্ধুকন্যা ফিরে না এলে একাত্তরের ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কী হতো? বঙ্গবন্ধুকন্যা না এলে কি এক সময়ের চরম খাদ্য বাংলাদেশ এভাবে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে যেতো?
বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ।
উপ-দপ্তর সায়েম খান বলেন, ৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে খুনি ঘাতক চক্র সু-পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার যে চেতনাবোধ সেই জায়গা থেকে এই রাষ্ট্রকে বিচ্যুত ঘটাতে চেয়েছিলো এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। সেটা করার অভিপ্রায়ে তারা সকল ধরনের কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশে গণতান্ত্রিক চেতনা ও মুল্যবোধ নির্বাসিত হয়েছিল। বাংলাদেশ একটা অবরুদ্ধ সময়ের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছিলো। গণতান্ত্রিকবিহীন বাংলাদেশে সামরিক শাসন এবং সামরিক বাহিনীর একজনকে নিয়ে দেশের সংবিধান আইন লঙ্ঘন করে নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। তারপর বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক পরিকল্পনা করে দেশের মানুষের সাথে তামাশা করতে থাকে। সেই অবরুদ্ধ সময়ে বাংলাদেশের কেউ একজন গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দিক সেটা ছিল আপামর জনসাধারণের প্রত্যাশা। সেই ব্যক্তিটি যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা হবেন তখন মানুষের আবেগের জায়গাটা আরও বেড়ে যায়। এবং তিনি দেশে আসার আগেই কিন্তু এই বাঙালি জাতি তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন আবেগ শ্রদ্ধার জায়গা থেকেই। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে দাবি, এই দাবিকে মেটাবে এই আকাঙ্খা থেকেই জনতার ঐক্যবদ্ধ দাবিকে সামনে তুলে ধরে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দেয়া হয়।
সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের মাটিতে পা রেখেই বলেছিলেন আমি সব হারিয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি আপনাদের মাঝেই আমার হারানো স্বজন খুঁজে পেতে চাই।
সায়েম খান আরও বলেন, যেদিন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন সেদিন বৈরী আবহাওয়া, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি তার মধ্যেও ধানমণ্ডির ৩২ থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য ছিল। এবং ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছিল স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছিলো চারপাশ। অবরুদ্ধ সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্রের কথা বলতে হয়েছে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে পিতার ন্যায় সমস্ত বাধা-বিপত্তি নিজের কাধে তুলে নিলেন এবং বাঙালি জাতির আদর্শের বাতিঘর আলোকবর্তিকা হয়ে নেতৃত্ব দিলেন। স্বৈরশাসকের নাগপাশ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হতে লাগলো। স্বৈরাতান্ত্রিকতার চৌহদ্দি ডিঙিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সাধ পেলো।
