ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ধীরে নামছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষত

আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ পিএম

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। এখনো অনেক জেলায় বন্যার পানি কমেনি। ভয়াবহ এক বন্যায় ডুবেছে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ আশপাশের জনপদ। কয়েক জেলায় বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর ও সর্দিসহ ঠাণ্ডাজনিত এবং পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। বন্যার পানি নামতে থাকায় ভেসে উঠছে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত এবং সড়কের ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন।

শনিবার (৩১ আগস্ট) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশের ১১ জেলায় উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায় এখনো পানিবন্দি আছে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৫ পরিবার। বন্যায় আরও পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বস্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৯ জনে। ফেনীতে সর্বোচ্চ ২৩ জন মারা গেছেন। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে এসব এলাকায় ৫১৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। বন্যাক্রান্ত এলাকায় চার কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা, ২০ হাজার ৬৫০ টন চাল, ১৫ হাজার বস্তা ও প্যাকেট শুকনা খাবার ও পশুখাদ্য বাবদ নগদ ৩৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে বন্যা প্লাবিত এলাকায় পানি নামছে ধীরগতিতে। জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় পানি কিছুটা নামলেও ব্যতিক্রম জেলার সদর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা। এসব এলাকায় খুবই ধীরগতিতে নামছে বন্যার পানি। বন্যায় মৎস্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক থেকে দেড় ইঞ্চি পানি কমেছে। জেলার ৫টি উপজেলার ৫৮টি

ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভার মানুষ এখনো পানিবন্দি। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত জ্বর, সর্দি ও নিউমোনিয়ার মতো নানা রোগ। ১৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে ঠিকমতো আহার হচ্ছে না। রয়েছে ওষুধ স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটও। আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।

ফেনী : ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তবে বন্যাকবলিতদের ভোগান্তি কমেনি। ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঁঞা উপজেলার কিছু ইউনিয়ন এখনো পানিতে নিমজ্জিত। জেলা প্রশাসনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, বন্যায় ফেনীতে ২৩ জন মারা গেছেন। বানভাসিদের অনেকে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। জেলার ৮০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান জানান, বিদ্যুতের পিলার হেলে পড়ায় ওইসব স্থানে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে, গ্রামের বাজারগুলোতে নিত্যপণ্য না থাকায় খাদ্য সংকটে ভুগছেন বাসিন্দারা। এ ছাড়া বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগবালাই। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।

নোয়াখালীতে বন্যার পানি কমছে ধীরগতিতে। বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর এলাকা। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালী : নোয়াখালীর সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে জেলা শহরে এখনো রয়েছে হাঁটু পানি। ডুবে আছে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। খাল দখলের কারণে সহজে নামছে না বন্যার পানি। এদিকে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার মির্জাপুরে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম উচ্চ বিদ্যালয় ও সাইক্লোন সেন্টারে খোলা আশ্রয়কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে রান্না করা সুস্বাদু খাবার।

কুমিল্লা : কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হচ্ছে। গোমতী নদীর পানি শনিবার সকালে স্বাভাবিক উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যার পরে দেখা দিচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। ভেসে উঠছে ভাঙা সড়কগুলো। কুমিল্লা-বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া-মীরপুর সড়ক, কুমিল্লা-সালদা সড়ক, রামপুর-বুড়িচং সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত সৃষ্টির পাশাপাশি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

নোয়াখালী : জেলায় বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো বিপুল সংখ্যক মানুষ পানিবন্দি থাকায় বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে নানা সংকট। বিশেষ করে টিউবওয়েলগুলো ডুবে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও বন্যায় চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ বেড়ে গেছে। জেলা প্রাণিসম্পদে হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় ১০৮টি খামারে ২ লাখ পশু মারা যায়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, জেলায় প্রায় ২ হাজার ৫ শত কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য সরকার জানান, জেলা সড়ক বিভাগের ১২৩ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) : কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে অবিরাম ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় মৎস্য খামার, পুকুর, মাছের দীঘি তলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মাছ পানির স্রোতে ভেসে গেছে। বন্যার পানি কমলেও বাড়িঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে লাখো মানুষের। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৬ হাজার ৮০৫টি মৎস্য খামার রয়েছে। নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুরাইয়া আক্তার লাকি জানান, এখনো বন্যার পানি রয়ে গেছে। বন্যার পানি চলে গেলে তালিকা করা হবে।

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) : বন্যায় ফটিকছড়ি উপজেলার বসতঘর, কৃষি, মৎস্য, সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, নদী ও খালের বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ৫০৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ঘর মেরামত ও পুনর্বাসনে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রাপ্ত অর্থ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এবারের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপটি গতকাল শনিবার মাঝরাত নাগাদ উত্তর অন্ধ্র-দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করার কথা।

মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায়; ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

MB/FI
আরও পড়ুন