‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’
‘অদম্য নারী পুরস্কারে’ ভূষিত বিশিষ্টজন, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এবং উপস্থিত সবাইকে আমার সালাম ও শুভেচ্ছা।
আসসালামু ওয়ালাইকুম।
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমি দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী, গৃহিনীসহ সকল পেশার, সকল বয়সের নারীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
আজকের দিনে, আমি শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের; যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানাই বীরাঙ্গনাসহ একাত্তরে সংগ্রামী নারীদের।
আজকের দিনে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিলে যে অসাধ্য সাধন করেছে তার সম্মুখসারীর ভূমিকায় ছিল এ দেশের নারীরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতি অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়েরা।
আজকের দিনে স্মরণ করি, সেইসব শহীদ নারীদের যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। শ্রদ্ধা জানাই, জুলাইয়ে আহত নারী যোদ্ধাদের।
দোয়া করি, তারা যেন দ্রুত সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।
গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারীতে থাকলেও আমাদের সমাজে এখনো অনেকক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এজন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান। দুঃস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের থাকার হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ নানান ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে। আরও কী কী করা যেতে পারে সেটা নিয়েও আলোচনা চলছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। অনেক সময় নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তারা বুঝতে পারেন না কোথায় অভিযোগ জানাবেন। নারীরা যেন তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন সেজন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা একটি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছি, তারাও তাদের সুপারিশগুলো দেবে।
সম্প্রতি মহিলাদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ এর যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা এই ‘নতুন বাংলাদেশে’ নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা আমাদের সকল শক্তি প্রয়োগ করে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।
আমাদের দেশের মেয়েরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শত বাধা পেরিয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছে।
কয়েকদিন আগে তারুণ্যের শক্তিকে উজ্জীবিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশজুড়ে আয়োজিত ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এ রেকর্ডসংখ্যক নারীরা ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, বাস্কেটবল ইত্যাদি খেলায় অংশ নিয়েছে। এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৭ লাখ ৪০ হাজার মেয়েরা প্রায় তিন হাজার খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ দর্শকসারিতে বসে তাদের উৎসাহ জুগিয়েছেন। হাজার হাজার দর্শকের এমন উপস্থিতিই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের সমাজে নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠায় পুরুষদেরও স্বতস্ফূর্ত সমর্থন রয়েছে।
নারী বিরোধী যে শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাকে আমরা দেশের সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই মোকাবেলা করব। তাছাড়া, আমাদের সমাজে এখনো এমন বহু মানুষ আছে যারা নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তাদের খাটো করে দেখে, অবজ্ঞার চোখে দেখে।
অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হলে, বৈষম্যহীন, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে নারীর পাশে দাঁড়ানোর, তাদেরকে সমর্থন জানানোর, কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের সমাজে নারীকে খাটো করে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। তা না হলে আমরা জাতি হিসেবে এগোতে পারব না।
আপনারা জানেন, পতিত স্বৈরাচার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে। আমাদেরকে এখন ততটাই সতর্ক থাকতে হবে যেমনটা আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বোচ্চ সজাগ থাকুন। নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলুন। একে অন্যের পাশে দাঁড়ান। একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করুন।
উপস্হিত সুধীমন্ডলী,
আজকের বিশ্বে নারীরা যতটুকু অধিকার আর স্বাধীনতা চর্চা করতে পারছেন এর পুরোটাই তাদের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা হয়েছিল নারীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। নিউইয়র্কের নারী শ্রমিকরা কর্মঘণ্টা কমানো, বেতন বৃদ্ধি ও ভোটের অধিকারের দাবিতে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামেন। অধিকার আদায়ের জন্য আহত ও নির্যাতিত হন।
নারীর প্রতি সহিংসতা নতুন বাংলাদেশ গড়ার অন্তরায়: ড. ইউনূস
ছয় অদম্য নারীকে পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা