ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকায় আগমন: বরফ গলছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে

আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম

দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক নিরুত্তাপতা কাটিয়ে আবারও সখ্যতার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক। সাম্প্রতিক সময়ের উচ্চপর্যায়ের সফর, বাণিজ্যিক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় উভয় দেশের মাঝে সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এরই অংশ হিসেবে শনিবার (২৩ আগস্ট) ঢাকায় দুইদিনের সফরে আসছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। সফরকালে অন্তত ছয় থেকে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে জানা গেছে।

‍ইসহাক দারের সফরসূচি

ইসহাক দার ২৩ আগস্ট দুপুরে ঢাকায় পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম। ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের আয়োজনে একটি রিসিপশনে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

২৪ আগস্ট সকালেই অনুষ্ঠিত হবে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। বাংলাদেশের পক্ষে এতে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবে বাংলাদেশ সরকার।

এছাড়া ইসহাক দার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। দিন শেষে তিনি রাতেই ঢাকা ত্যাগ করবেন।


সফরকালে দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি
  • সাংস্কৃতিক বিনিময়
  • ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা
  • বাণিজ্য ও বিনিয়োগে যৌথ কার্যকরী গ্রুপ গঠন
  • কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা
  • বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা
  • পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি গবেষণার বিষয়েও দুটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের চেষ্টা চলছে।

আঞ্চলিক কৌশল, ভারত ও চীনের ভূমিকা আলোচনায়

সফরে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক টানাপড়েন ও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে চীন-পাকিস্তান জোটের কৌশল নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান এই মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছুটা দূরত্বকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব মোকাবিলায় বিকল্প শক্তি গঠনের পথ খুঁজছে ইসলামাবাদ।

পুরোনো ইস্যুতে ছাড় নয়: ১৯৭১ এর প্রশ্নে কঠোর ঢাকা

যদিও সম্পর্কোন্নয়নে পাকিস্তান আগ্রহ দেখাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট করেছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বেদনাবিধুর ইতিহাস ভুলে যাওয়া হবে না।

সফরকালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উঠে আসবে:

  • ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া
  • যুদ্ধজনিত ক্ষতিপূরণ
  • আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন
  • সম্পদের হিস্যা ও পাওনা পরিশোধ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ইতিহাসকে উপেক্ষা করে এগোনোর সুযোগ নেই। ১৯৭১ এখনো বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর একটি অধ্যায়।

বাণিজ্য ও কানেকটিভিটিতে জোর

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের আগমনের পরপরই ইসহাক দারের এই সফর দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ইসলামাবাদের আগ্রহের বার্তা দেয়। বাণিজ্য বৃদ্ধি, সরাসরি ফ্লাইট চালু, রপ্তানি পণ্যে শুল্ক ছাড় ও যৌথ বাণিজ্যিক ফোরাম গঠনের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় অগ্রাধিকার পাবে।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানেই আগ্রহী ঢাকা

ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন সবার সঙ্গে পরিমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক চায়। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেই কৌশলগত সম্পর্ক পরিচালনায় আগ্রহী বর্তমান সরকার।

DR/MMS
আরও পড়ুন