রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুনের মাধ্যমে নির্যাতন করেছে। লক্ষাধিক মিথ্যা মামলায় ৫০ লাখ মানুষকে আসামি করে মানুষের অধিকার হরণ করেছিল। সুতরাং আজকে সবাইকে বুঝতে হবে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা কী? সরকারকেও সেটি উপলব্ধি করতে হবে। একইসঙ্গে তারা যখন উপলব্ধি করবে যে, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ওপর আস্থা রেখেছে তখন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই হবে সরকারের মূল দায়িত্ব।’
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘এখানে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলো, নাকি মেয়রাল ইলেকশন হলো সেটি কোনো কথা নয়। দেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ডক্ট্রিন অব নেসেসিটি মোতাবেক বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলছি। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন ঘটতে পারে। যারাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন তারাই সরকার গঠন করবেন। সেটিই হলো গণতন্ত্র। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ৫৩ বছর আমরা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছি। বিগত দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণ তাদের মতের প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি চলতে থাকবে। আমরা একটি নির্বাচিত সংসদ গঠন করতে চাই। আওয়ামী লীগের মতো ব্যালট চুরি করে দিনের ভোট রাতে করা দেশের মানুষ তা কখনো স্বীকার করেনি। পরবর্তীতে যারাই ক্ষমতায় আসবে তারাই সংস্কার বা অন্য কাজ করবে। যে কেউ দল গঠন করতে চাইলে করবে। এখানে কোনো বাধা নেই।’
দীর্ঘ ৯ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও ফ্লোরিডা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমরানুল হক চাকলাদার। টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। সেখান থেকে সরাসরি তিনি শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে যান।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে ইমরানুল হক চাকলাদারসহ নেতারা ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, গবেষণা সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, মিডিয়া সেলের সদস্য শাম্মী আক্তার, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ড. মঈন খান বলেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। সেই মন্ত্রে আমরা উদ্বুদ্ধ। আমরা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে পারে তাহলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে কেন পারবে না? সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি গণঅভ্যুত্থানের পর দেশকে স্বাভাবিক করার জন্য। তাদের দায়িত্ব ও কাজ বুঝতে হবে।’
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীর অগ্রযাত্রা নিয়ে একটি ডকুমেন্টেশন তৈরির দাবি উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা মতামত দিয়েছি।’
মঈন খান আরও বলেন, ‘ইমরানুল হক চাকলাদার দেশে ফিরেছেন। যিনি এক দশক ধরে ফ্লোরিডা বিএনপির হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বৈরাচার বিদায়ের ফলে তিনি দেশে ফিরেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন।’
