ঢাকা
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

ড. ইউনূসের পদত্যাগের খবরে রাজনৈতিক দল ও উপদেষ্টাদের বক্তব্য

আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম

দেশে রাজনৈতিক অবস্থা এখন চরমে। এই পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন- এমন খবরে তোলপাড় সারা দেশ। এই গুঞ্জনের পরপরই দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত নানাভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে। সব পক্ষ থেকে দেশের ‘সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির’ কথা উল্লেখ করে ঐক্যের ডাক দেওয়া হচ্ছে। 

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিমের আহ্বানে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ পাঁচটি দলের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের ফেসবুক পোস্টে দেওয়া মন্তব্য তুলে ধরা হলো।  

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বৃহস্পতিবার ফেসবুকে একটি বিস্ফোরক স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন, ‘বিএএল, নর্থ ও দিল্লি জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরকেই খাবে।’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘নর্থ’ বলতে সাধারণত ক্যান্টনমেন্ট বোঝানো হয়। ‘বিএএল’ হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত রূপ। আসিফ আরও যোগ করেন, ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তর আর এদেশের মানুষের ভাগ্য কোনোটাই ইতিবাচক পথে যাবে না আরকি। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধ হয় এদেশের ভাগ্য।’

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘পূর্বের যে কোনো বিভাজনমূলক বক্তব্য ও শব্দচয়নের কারণে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড় দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য।’ তিনি অভ্যুত্থানের সব শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে।’

জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলে দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খণ্ড বিখণ্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশি-বিদেশি দোসরেরা আমাদের তছনছ করার হীন পাঁয়তারা করবে।’ তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দেন।

গণ-অভ্যুত্থানের আরেক মুখ বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা পোস্টে বলেন, ‘দেশ কোনো ধরনের রাজনৈতিক ঐক্যের পথে নেই। এই ঐক্য ভেঙে গেছে গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবরের দিকেই। খোলসটা ছিল একরকমভাবে। বর্তমানে খোলসটাও খুলে পড়ছে তাই অনেকে অবাক হচ্ছে। সব পক্ষ যদি কিছুটা পরিপক্বতা দেখাত, শহীদদের জীবনের কথা ভেবে কিছুটা ছাড় দিত তাহলে অন্তত ইলেকশনের আগ পর্যন্ত দেশটা স্ট্যাবল থাকত। দেশটা স্ট্যাবল না হতে দেওয়ার জন্য অনেক ধরনের ফোর্স ভেতরে সক্রিয় আছে। আর জুলাই এর সকল লড়াকু শক্তিই ক্ষমতা প্রশ্নে অস্থির হয়ে গেছে। যেন গোটা দেশটাই একটা খেলামাত্র।’

রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, ধৈর্য ও টেবিলে ঐকমত্যের রাজনীতিই দেশকে একটা গণতান্ত্রিক উত্তরণের দিকে নিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

উদ্ভূত পরিস্থিতির পুরো দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দিয়েছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা যাচ্ছে যে জন–আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সরকারের যা করণীয়, তা যথাসময়ে না করে চাপের মুখে করার সংস্কৃতি ইতিমধ্যেই সরকারের সক্ষমতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে এবং অন্যদেরও একই প্রক্রিয়ায় দাবি আদায়ের ন্যায্যতা প্রদান করেছে। এই অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় পুরোটাই সরকারের।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত ঐক্যে ফাটল ধরলে তা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

 

RA
আরও পড়ুন