ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিম প্রতিনিধি

আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪২ এএম

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা যা ন্যায়, সহনশীলতা ও মানবিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই মুসলিম শাসকরা দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে অমুসলিমদের প্রশাসন, কূটনীতি, চিকিৎসা ও পরামর্শ পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন যা আধুনিক রাষ্ট্রশাসনের চমৎকার দৃষ্টান্ত। 

ইতিহাসে দেখা যায়, রাসূল (সা.) হিজরতের মতো সংবেদনশীল অভিযানে, অমুসলিম আব্দুল্লাহ ইবনে উরাইকিতকে রাহবারের দায়িত্ব দেন। তিনি ছিলেন কুরাইশদের একজন দক্ষ পথপ্রদর্শক। 

ধর্ম নয় এখানে প্রধান বিবেচ্য ছিল দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা। এ সময় বিভিন্ন গোত্র ও সম্প্রদায়ের দূতরা মদিনায় আসতেন এবং রাষ্ট্রীয় চুক্তিতে অংশ নিতেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় এ ধরনের উন্মুক্ততা ইসলামের উদারতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে।

খলিফা উমর (রা.) প্রশাসনিক দক্ষতায় খ্যাত। তার শাসনামলে অমুসলিম বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ইতিহাসে যাদের নাম স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।

হরমুজান (সামরিক উপদেষ্টা)

পারস্যের অভিজ্ঞ রাজনেতা। মদিনায় অবস্থানকালে তিনি রোম ও পারস্যের সামরিক নকশা ব্যাখ্যা করে মুসলিম বাহিনীকে কৌশলগত সহায়তা দেন।

জিন্দার (হিসাবরক্ষক ও রাজস্ব সহকারী)

মাজুসি বংশোদ্ভূত আর্থিক কর্মকর্তা। রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়ের নথি প্রস্তুত ও কর ব্যবস্থায় তার সুনাম ছিল।

নাহবত (প্রাদেশিক প্রশাসনিক সহকারী)  

পারস্যের প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিল অসাধারণ। উমর (রা.) তাকে বহু প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ দেন।

সিরিয় খ্রিষ্টান কর্মকর্তা 

চিকিৎসা, কর, আর্থিক নথিপত্র ও লেখনি বিভাগে বহু খ্রিষ্টান কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ করেছিলেন।

উমাইয়া শাসনামলে সিরীয় খ্রিষ্টানরা রাষ্ট্রের আর্থিক কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আরবিকরণ নীতি চালুর আগ পর্যন্ত তারা কর, রাজস্ব ও দাপ্তরিক নথিতে দায়িত্ব পালন করেন।

আব্বাসীয় যুগে অমুসলিম প্রতিনিধিদের ভূমিকা আরও বিস্তৃত হয়। খ্রিষ্টানরা ব্যক্তি পরিবার পরপর কয়েক প্রজন্ম ধরে খলিফাদের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও উপদেষ্টা ছিলেন। রাজস্ব দপ্তরে ইহুদি ও খ্রিষ্টান কর্মকর্তাদেরও দেখা যায়।

কুরআন হাদিস ও ইতিহাস আমাদের শেখায়, ইসলামি রাষ্ট্রে প্রিন্সিপাল থাকবে কুরআন ও সুন্নাহ। তবে দক্ষতার ভিত্তিতে অমুসলিমদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিতে কোনো অসুবিধা নেই।

HN