ইসলামি শরিয়ত কোনো অবস্থাতেই মানুষের ওপর অসহনীয় কষ্ট চাপিয়ে দেয় না। সহজ ও বাস্তবসম্মত জীবনব্যবস্থার নাম ইসলাম। তীব্র শীতের সময় অজু বা ফরজ গোসল করা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে— এ অবস্থায় তায়াম্মুম করা যাবে কিনা?
পানি গরম করার সুযোগ থাকলে
ঠান্ডা পানি দিয়ে অজু বা গোসল করা যদি কারো জন্য কষ্টকর বা ক্ষতিকর হয়, তাহলে প্রথমেই দেখতে হবে পানি গরম করার কোনো সুযোগ আছে কি না। যদি পানি গরম করার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে তার ওপর পানি গরম করে অজু বা গোসল করাই কর্তব্য। এ অবস্থায় তায়াম্মুম করা বৈধ নয়; কারণ শরিয়তে বিকল্প গ্রহণের অনুমতি তখনই আসে, যখন মূল উপায় বাস্তবিকভাবে অক্ষমতার মধ্যে পড়ে।
পানি গরমের সুযোগ না থাকলে
যদি পানি গরম করার কোনো সুযোগ না থাকে এবং ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে তীব্র শীতে মৃত্যু, অঙ্গহানি, মারাত্মক অসুস্থতা বা বিদ্যমান রোগ বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে— যেমন কোনো অঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া, বুকে ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর বা সর্দি দেখা দেওয়া, অ্যালার্জি, বাত-ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি বেড়ে যাওয়া—তাহলে অজু বা গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে।
কুরআনের দলিল
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
‘হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন সলাতের জন্য উঠবে, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল এবং কনুই পর্যন্ত হস্তদ্বয় ধৌত করবে। আর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করবে। তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাক তবে বিধিমত পবিত্রতা অর্জন করবে। আর যদি পীড়িত হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ যদি মলত্যাগ করে আসে অথবা যদি তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর আর পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে তা দিয়ে তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের উপর সংকীর্ণতা চাপিয়ে দিতে চান না, তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান আর তোমাদের প্রতি তাঁর নি‘আমাত পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা আল-মায়েদা: আয়াত ৬)
তায়াম্মুমের নিয়ম
অজু ও গোসল—উভয়ের বিকল্প হিসেবেই একই নিয়মে তায়াম্মুম করা হয়। তায়াম্মুমের পদ্ধতি হলো— নিয়ত করে পবিত্র মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তু (যেমন বালু, পাথর, চুন, সুরমা ইত্যাদি) স্পর্শ করা; একবার হাত দিয়ে মুখ মাসেহ করা; আরেকবার কনুই পর্যন্ত উভয় হাত মাসেহ করা।
তায়াম্মুম ভাঙার কারণ
তায়াম্মুম অজু ও গোসলের বিকল্প হওয়ায়, অজু-গোসল যে সব কারণে ভেঙে যায়— ঠিক সেসব কারণেই তায়াম্মুমও ভেঙে যায়। এ ছাড়া যে ওজরের কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল, তা দূর হয়ে গেলেও তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যায়। যেমন— শীত কমে যাওয়া বা পানি গরম করার সুযোগ সৃষ্টি হলে আর তায়াম্মুম বৈধ নয়।
শীতে অজুর বিশেষ ফজিলত
কনকনে শীত, বৃষ্টি বা কঠিন পরিবেশে অজু করা কষ্টকর হলেও এতে সওয়াব বেড়ে যায়। এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন—
‘আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলব, যার মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহসমূহ মাফ করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন?’ সাহাবারা বললেন, ‘অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসুল!’ তিনি বললেন, ‘কষ্টকর অবস্থায় পূর্ণাঙ্গভাবে অজু করা, দূরত্ব অতিক্রম করে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজ আদায়ের পর পরবর্তী নামাজের অপেক্ষায় থাকা।’ (মুসলিম: ৪৯৪)
অতএব, তীব্র শীত আমাদের জন্য একদিকে যেমন পরীক্ষা, তেমনি এটি গুনাহ মাফ, মর্যাদা বৃদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগও বয়ে আনে। প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের জন্য অজু করা অবশ্য কর্তব্য। পাশাপাশি সারাদিন অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা উত্তম। শীত বা গরম—সব অবস্থাতেই ধীরে-সুস্থে ও সুন্দরভাবে অজু করা উচিত, তাড়াহুড়া বা দায়সারাভাবে নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ৪টি আমল বেশি বেশি করুন