একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর প্রতি মাসেই পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এসময় ফরজ সব ইবাদত (নামাজ, রোজা) নারীদের জন্য নিষেধ করা হয়েছে। তবে পুরো রমজান মাস একটানা রোজা রাখতে অনেক নারী ঋতুস্রাব বন্ধ রাখতে ওষুধ বা পিল গ্রহণ করেন। ওষুধ খেয়ে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখলে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে রোজা শুদ্ধ হবে।
তবে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখার জন্য ওষুধ খাওয়া জায়েজ হওয়ার শর্ত হলো, চিকিৎসকরা নিশ্চিত করবেন যে এসব ওষুধ গ্রহণের ফলে কোনো তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে না। যদি এতে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে তা গ্রহণ করা জায়েজ হবে না। কারণ ইসলামি শরিয়তে অন্যের ক্ষতি করা যেমন নাজায়েজ, নিজের ক্ষতি করাও নাজায়েজ। ইসলামে স্বাস্থ্য রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
ইসলাম ঋতুস্রাবকে নারীদের ত্রুটি বিবেচনা করে না এবং ঋতুস্রাবের কারণে রোজা না রাখতে পারলে গুনাহ হবে না বা রমজান পালনের সওয়াবও কমবে না। তাই ক্ষতিকর না হলে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখার জন্য ওষুধ গ্রহণ করা যদিও জায়েজ, তথাপি একজন মুসলমান নারীর জন্য আল্লাহ তাআলার নির্ধারণ মেনে নেওয়া, ঋতুস্রাব স্বাভাবিক রাখা এবং এ সময়ে রোজা ভাঙাই বেশি ফজিলতপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।
রোজা অবস্থায় হায়েজ বা ঋতুস্রাব শুরু হলে রোজা ছেড়ে দিতে হবে। রোজা অবস্থায় পিরিয়ড শুরু হলে ফরজ রোজা ছেড়ে দিতে হয় এবং পরবর্তীতে এর কাজা আদায় করার বিধান।
নারীর পিরিয়ডের ঋতুস্রাবের সময়সীমা ছয় বা সাত দিন হয়; কিন্তু মাঝেমধ্যে এ সময়সীমা বৃদ্ধি হয়ে আট, নয়, দশ অথবা এগারো দিনে গড়ায়, তা হলে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাকে নামাজ আদায় ও রোজা রাখতে পারবেন না। (সুরা বাকারা : ২২২)
আধুনিক যুগে ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা যায়। কোনো নারী যদি ওষুধ খেয়ে রোজা রাখতে চান, তা হলে তার রোজা হয়ে যাবে। তবে প্রাকৃতিক নিয়মে ব্যত্যয় ঘটানো অনেক সময় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। তাই আল্লাহর স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী চলা এবং ওষুধ গ্রহণ না করাই শ্রেয়। কোনো কোনো নারী রমজানের রোজা রমজান মাসেই পুরো করার উদ্দেশ্যে ওষুধের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রেখে থাকে।
এ ব্যাপারে শরীয়তের মাসআলা হচ্ছে, যে পর্যন্ত একজন নারীর মাসিক দেখা না দিবে ওই পর্যন্ত তিনি নিয়মিত নামাজ-রোজা করে যাবেন; যদিও কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাসিক বন্ধ রাখা হোক না কেন। তবে এ ধরনের পদ্ধতি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না সে বিষয়েও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নেওয়া উচিত।
ওষুধ সেবনের কারণে হলেও একজন নারী যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে অর্থাৎ তার মাসিক স্রাব চালু না হবে ততক্ষণ তাকে নামাজ-রোজা করে যেতে হবে এবং এ অবস্থায় সে তাওয়াফও করতে পারবে।
আর সে যেহেতু পবিত্র অবস্থাতেই নামাজ-রোজা ইত্যাদি পালন করেছে তাই পরবর্তীতে তাকে এ সময়ের নামাজ-রোজার কাজা করতে হবে না। আর এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু এটি কোনো উত্তম পন্থাও নয়। বিশেষ ওজর না থাকলে স্বাভাবিক নিয়মে চলাই উচিত।
সূত্র: মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ১২১৯, ১২২০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৯৯; জামিউ আহকামিন নিসা ১/১৯৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/৩০৮
