ঢাকা
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ইতিকাফের বিধান ও ফজিলত 

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০২:২৮ পিএম

‘ইতিকাফ’ আরবি শব্দ, অর্থ হলো অবস্থান করা, আবদ্ধ করা বা আবদ্ধ রাখা। পরিভাষায় ইতিকাফ হলো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ইতিকাফের নিয়তে নিজেকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবদ্ধ রাখা।

ইতিকাফের বিধান
ইতিকাফ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদত। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আক্ষরিক অর্থেই বাহ্যত আল্লাহর সন্নিধানে চলে যায়। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগে থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ কিফায়াহ। 

কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবেন। আর কেউই আদায় না করলে সবাই দায়ী থাকবেন। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে যিনি বা যারা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তারাই সওয়াবের অধিকারী হবেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলনস্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ‘মাকামে ইব্রাহিম’কে নামাজের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। আর যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করো, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেওয়া সীমানা। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৫)। 

হজরত আয়িশা সিদ্দীকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) আজীবন রমজানের শেষ দশকগুলো ইতিকাফ করেছেন। তার ওফাতের পরও তার বিবিরা ইতিকাফ করতেন। (বুখারি ও মুসলিম; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৪৬, পৃষ্ঠা: ১২৯)।

ইতিকাফ আল্লাহর ঘরে, আল্লাহর সঙ্গে
পুরুষদের মসজিদে ইতিকাফ করতে হয়; নারীরা নির্দিষ্ট ঘরে বা নির্ধারিত কক্ষে ইতিকাফ করবেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ওই ঘর বা কক্ষ থেকে বের হবেন না। অজু ইস্তিঞ্জা বা পাক পবিত্রতার জন্য বাইরে বের হলে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন না বা সালাম বিনিময় করবেন না। তবে দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন এবং কেউ ভেতরে এলে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারবেন। ইতিকাফ কক্ষে এমন কেউও অবস্থান করতে পারবেন, যারা ইতিকাফ করছেন না। ইতিকাফ কক্ষটি যদি শয়নকক্ষ হয় এবং একই কক্ষে বা একই বিছানায় অন্য যে কেউ অবস্থান করেন, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই; এমনকি স্বামীও পাশে থাকতে পারবেন; তবে স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ ইতিকাফ অবস্থায় নিষিদ্ধ; এর দ্বারা ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ো না, যখন তোমরা ইতিকাফরত থাকবে মসজিদে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)।

ইতিকাফের ফজিলত
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, তিনি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহ তাআলা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক সমান দূরত্ব সৃষ্টি করবেন, যা আসমান জমিনের দূরত্ব অপেক্ষা বেশি।’ (তবারানি শরিফ)
 
রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, 
যে ব্যক্তি রমজান মাসে দশ দিন ইতিকাফ করবে তার জন্য দুইটি হজ্জ ও দুইটি ওমরার সওয়াব লেখা হবে। (বায়হাকি, হাদিস: ৩৬৮০)
 
এখান থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা হলো, আমরা রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করব এবং প্রত্যেক বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করব।

AHA/KK
আরও পড়ুন